গীতাঞ্জলি
লেখক | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর |
---|---|
অনুবাদক | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর |
দেশ | ভারত |
ভাষা | বাংলা |
ধরন | কবিতা |
প্রকাশক | বিশ্বভারতী গ্রন্থনবিভাগ |
প্রকাশনার তারিখ | ১৯১০ |
ইংরেজিতে প্রকাশিত | ১৯১২ |
মিডিয়া ধরন | মুদ্রিত গ্রন্থ |
পৃষ্ঠাসংখ্যা | ৯৬ |
পূর্ববর্তী বই | খেয়া |
পরবর্তী বই | গীতিমাল্য |
গীতাঞ্জলি হল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা একটি কাব্যগ্রন্থ। এই বইয়ে মোট ১৫৭টি গীতিকবিতা সংকলিত হয়েছে। কবিতাগুলি ব্রাহ্ম-ভাবাপন্ন ভক্তিমূলক রচনা। এর বেশিরভাগ কবিতাতেই রবীন্দ্রনাথ নিজে সুরারোপ করেছিলেন। ১৯০৮-০৯ সালে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় এই কবিতাগুলি প্রকাশিত হয়। এরপর ১৯১০ সালের ৫ সেপ্টেম্বর (১৩১৭ বঙ্গাব্দের ভাদ্র মাসে) গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হয়। গ্রন্থটি কলকাতার ইন্ডিয়ান পাবলিশিং হাউসের পক্ষে সতীশচন্দ্র মিত্র প্রথম প্রকাশ করেন এবং মুদ্রক ছিলেন কান্তিক প্রেসের মতিলাল গঙ্গোপাধ্যায়।[১][২]
১৯১২ সালে রবীন্দ্রনাথের সং অফারিংস কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হয়। এতে গীতাঞ্জলি ও সমসাময়িক আরও কয়েকটি কাব্যগ্রন্থের কবিতা রবীন্দ্রনাথ নিজে অনুবাদ করে প্রকাশ করেন। ১৯১৩ সালে ইংরেজি কাব্যগ্রন্থটির জন্য রবীন্দ্রনাথ সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন।
২০১০ সালে গীতাঞ্জলি প্রকাশের শতবর্ষ-পূর্তি উপলক্ষে কলকাতা মেট্রোর নাকতলা স্টেশনটির নামকরণ করা হয় "গীতাঞ্জলি মেট্রো স্টেশন"।[৩][৪]
ইতিহাস
রচনা
১৯০৮ সালের পূজার ছুটিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শিলাইদহে গিয়েছিলেন। ছুটির পর ফিরে শান্তিনিকেতনে একটানা পাঁচ মাস ছিলেন। এই সময় তিনি তার বিখ্যাত শান্তিনিকেতন প্রবন্ধ গ্রন্থটি রচনা করেন। পরের বছর বর্ষা ও শরৎ কালে তিনি কিছুদিন শিলাইদহে গিয়েছিলেন। ফিরে কিছুদিন কলকাতায় জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে কাটান। গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের কবিতা ও গানগুলি শিলাইদহ, শান্তিনিকেতন ও কলকাতায় রচিত হয়। জানা যায়, রবীন্দ্রনাথ এই সময় কঠোর নিরামিশাষী ছিলেন। দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের আশ্রম পরিচালনার আদেশগুলি এই সময় তিনি কঠোরভাবে মেনে চলতেন। এমনকি অসুস্থতার সময় ডাক্তার আমিষ খাওয়ার পরামর্শ দিলেও, তিনি তা শোনেননি।[৫]
গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থ রচনার প্রসঙ্গে রবীন্দ্র-গবেষক সুকুমার সেন লিখেছেন:
'উৎসর্গ' আর 'খেয়া'র সময়ে গান লেখা চলিয়াছিল প্রচুর। ইতিমধ্যে (১৩১৪ সালের মাঝামাঝি) কনিষ্ঠ পুত্রের [শমীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৯৬-১৯০৭)] আকস্মিক মৃত্যুতে কবিধর্ম কিছুদিনের মতো যেন বিচলিত হইল। তখন শোকবেদনার উৎসাহ হইল এক অভিনব ভক্তিরসে। তাহার মুখ্য প্রকাশ 'গীতাঞ্জলি'তে (১৩১৭)।[৬]
রবীন্দ্র-জীবনীকার প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের মতে:
'প্রায়শ্চিত্ত' [১৯০৯] নাটক লিখতে লিখতে অনেকগুলি গান লিখলেন [রবীন্দ্রনাথ]-তার কয়েকটির মধ্যে 'গীতাঞ্জলি' পর্বের পদধ্বনি শোনা গেল। জীবন গভীর একটা রসের স্তরে প্রবেশ করছে, গানগুলি তারই আগমনী।[৭]
ইংরেজি অনুবাদ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিজেই গীতাঞ্জলি-র কবিতা ও গানগুলি ইংরেজি ভাষায় অনুবাদ করার কাজ শুরু করেছিলেন। মূল বাংলা কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ৫৩টি গান সং অফারিংস সংকলনে প্রকাশিত হয়। তবে রবীন্দ্রনাথ নিজে সব কটি কবিতা ও গানের অনুবাদ করেননি। কয়েকটি অনুবাদ করেছিলেন ব্রাদার জেমস। ব্রিটিশ কবি ও অনুবাদক জো উইন্টার বাংলাভাষা শিখে মূল বাংলা গীতাঞ্জলি সর্বাংশে ইংরেজি ভাষায় অনুবাদ করেছেন। নিচে গীতাঞ্জলি কাব্যের ১২৫ সংখ্যক গানটি উদ্ধৃত করা হল:
“ |
আমার এ গান ছেড়েছে তার সকল অলংকার |
” |
রবীন্দ্রনাথের করা ইংরেজি অনুবাদে এটি হয়েছে (Gitanjali, verse VII):[৮]
|
|
গীতাঞ্জলি: সং অফারিংস
গীতাঞ্জলি: সং অফারিংস (ইংরেজি: Gitanjali - Song Offerings) ইংরেজি ভাষায় অনূদিত রবীন্দ্রনাথের প্রথম সংকলনগ্রন্থ। এর কবিতাগুলি পাশ্চাত্যে খুবই সমাদৃত হয়। কিন্তু গ্রন্থদুটির নাম অভিন্ন হলেও ইংরেজি গীতাঞ্জলিতে বাংলা গীতাঞ্জলি'র একচ্ছত্র আধিপত্য নেই। রবীন্দ্রনাথ বাংলা গীতাঞ্জলি'র ১৫৭টি গান/কবিতা থেকে ইংরেজি গীতাঞ্জলিতে (Song Offerings) মাত্র ৫৩টি স্থান দিয়েছেন। বাকি ৫০টি বেছে নিয়েছেন গীতিমাল্য, নৈবেদ্য, খেয়া, শিশু, কল্পনা, চৈতালি, উৎসর্গ, স্মরণ ও অচলায়তন থেকে। গীতিমাল্য থেকে ১৬টি, নৈবেদ্য থেকে ১৫টি, খেয়া থেকে ১১টি, শিশু থেকে ৩টি, কল্পনা থেকে ১টি, চৈতালি থেকে ১টি, উৎসর্গ থেকে ১টি, স্মরণ থেকে ১টি এবং অচলায়তন থেকে ১টি কবিতা/গান নিয়ে তিনি ইংরেজি গীতাঞ্জলির বিন্যাস করেছেন। অর্থাৎ ইংরেজি গীতাঞ্জলিতে তিনি মোট ৯টি গ্রন্থের কবিতা বা গানের সন্নিবেশ ঘটিয়েছেন।
অনুবাদের ইতিহাস
১৯১২ খ্রিষ্টাব্দের শুরুর দিকে রবীন্দ্রনাথের জাহাজযোগে লন্ডন যাওয়ার কথা ছিল। যাত্রার পূর্বে তিনি অর্শ রোগের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং পদ্মা নদীতে নৌকায় বিশ্রাম নিতে শুরু করেন। এ সময় তিনি তার গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থ থেকে সহজ ইংরেজিতে অনুবাদ শুরু করেন। পরবর্তীকালে গীতাঞ্জলি ৫৩টি এবং গীতিমাল্য, নৈবেদ্য, খেয়া প্রভৃতি আরো নয়টি কাব্যগন্থ থেকে ৫০টি - সর্বমোট ১০৩টি কবিতার অনুবাদ নিয়ে একটি পাণ্ডুলিপি তৈরি করেন। এই পাণ্ডুলিপি সঙ্গে করে রবীন্দ্রনাথ ২৭ মে ১৯১২ বোম্বাই বন্দর থেকে বিলেত যাত্রা করেন। যাত্রকালে আরো কিছু কবিতা অনুবাদ করে সংযোজন করেন। তিনি লন্ডনে পৌঁছান ১৬ জুন। এ সময় উইলিয়াম রোটেনস্টাইনের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় এবং পাণ্ডুলিপিটি তাকে দেয়া হয়। তিনি টাইপ করিয়ে পাণ্ডুলিপিটি কবি ইয়েটস সহ আরো কয়েকজন কাব্যবোদ্ধাকে প্রদান করেন। ১৯১২ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে লন্ডনে ইন্ডিয়া সোসাইটি কর্তৃক গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়। সঙ্গ অফরিংস-এর ভূমিকা লিখেছিলেন স্বয়ং কবি ইয়েটস্। এ ভূমিকাটি ছিল একই সঙ্গে আন্তরিক ও যথেষ্ট প্রশস্তিতমূলক।
নিজ অনুবাদে রবীন্দ্রনাথ বেশ স্বাধীনতা নিয়েছিলেন। আক্ষরিক তো নয়ই বরং ভাবানুবাদেরও বেশি ; কখনো কবিতাংশ সংক্ষেপিত করা হয়েছে কখনো বা স্রেফ ভাবার্থ করা হয়েছে ; কেবল কবিতার ভাবসম্পদ অক্ষত রাখা হয়েছে। পুস্তকাকারে প্রকাশ কালে কবি ইয়েটস কিছু সম্পাদনার কাজ করেছিলেন। ইংরেজিভাষী সমালোচকরা সানন্দে তার অনুবাদের উৎকর্ষ স্বীকার করেছেন। তবে এ উৎকর্ষর ক্রমাবনতি হয়েছিল বলে মনে করা হয়। রবীন্দ্রনাথের জীবদ্দশায় ইংরেজ পাঠক ও সমালোচক এবং রবি-জীবনীকার এডওয়ার্ড টম্পসন মন্তব্য করেছেন, "প্রথম দিকের অনুবাদ ছিল নিখুঁত ও মনোরম ; শেষের দিকে অযত্নে ও নৈমিত্তিকভাবে অনুবাদের কাজ সারা হয়েছে"। [৯] তবে স্বকৃত অনুবাদ নিয়ে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথের মনেই দ্বিধা-দ্বন্দ্ব্ব ছিল। ইয়োরোপে যাওয়ার আগে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়ে শিলাইদহে নীত হন, তখন সময় কাটানোর ছলেই তিনি গীতাঞ্জলি’র অনুবাদে হাত দেন। কিন্তু প্রিয় কবিতাগুলোর অনুবাদ তাঁর কাছে সন্তোষজনক মনে হয়নি, মনে হয়েছিল ‘school-boy exercise'।[১০]।
প্রকাশনা ইতিহাস
১৯১২ খ্রিস্টাব্দে লন্ডনের ইন্ডিয়া সোসাইটি কর্তৃক গ্রন্থটি প্রথম প্রকাশিত হয়। এই সংস্করণের মুদ্রণ সংখ্যা ছিল ৭৫০। মূল্য সাড়ে চার শিলিং। এবং আমেরিকায় সোয়া এক ডলার। এতে কবি ইয়েটস-এর ভূমিকা এবং রটেনস্টেইন অঙ্কিত কবির একটি পেন্সিল স্কেচ প্রতিকৃতি সংযোজন করা হয়। পরে ম্যাকমিলান কোম্পানী এই গ্রন্থের দ্বিতীয় সংস্করণ একযোগে লন্ডন ও নিউ ইয়র্ক থেকে প্রকাশ করে। মূল্য কমিয়ে রাখা হয় ইংল্যান্ডে সাড়ে চার শিলিং এবং আমেরিকায় সোয়া এক ডলার। উল্লেখ্য যে ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে ম্যাকমিলান কোম্পানী কর্তৃক প্রকাশিত সংস্করণটিকে প্রামাণ্য ধরা হয়। ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত দি রেমিনিসেন্স অনুবাদ গ্রন্থটির শেষে প্রদত্ত বিজ্ঞাপন থেকে দেখা যায় যে ততোদিনে "স্যার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর"-এর গীতাঞ্জলি-র সাঁইত্রিশ সহস্রতম মুদ্রণ বাজারে ছাড়া হয়েছে।
ইয়েটস-এর ভূমিকা
এই সংকলন গ্রন্থটির ভূমিকা লিখেছিলেন ইংরেজ কবি ডব্লু বি ইয়েটস।
পাশ্চাত্যে সমালোচনা
গীতাঞ্জলি: দ্য সং অফারিংস প্রকাশনার পর লন্ডনের পত্র-পত্রিকায় আলোচনা-সমালোচনা মুদ্রিত হয়। লন্ডনে রথেনস্টাইনের বাসগৃহে কবি ইয়েটস্ যেদিন বন্ধু-বান্ধবকে গীতাঞ্জলি থেকে পাঠ করে শুনিয়েছিলেন সেদিন ঐ আসরে কবি মে সিনক্লেয়ার উপস্থিত ছিলেন। রবীন্দ্রনাথের কবিতায় অভিভূত হয়ে তিনি নিঃসংকোচে লিখেছিলেন : “রবীন্দ্রনাথের কবিতায় মানুষের সাধারণ আবেগমথিত নিবেদনের মিলন হয়েছে এমন এক সঙ্গীত ও ছন্দে যা সুইনবার্নসুইনবার্নের চেয়েও পরিশীলীত। এমন এক সঙ্গীত ও ছন্দ যা পশ্চিমী শ্রোতার কাছে অচিন্তনীয়, যাতে আছে শেলীর অপার্থিব চেতনা, অদ্ভুত সূক্ষ্মতা ও তীব্রতা.... এবং তা এমন সহজিয়া রীতিতে যাতে এই যাদুকরী-আবেশকেও মনে হয় পৃথিবীর সবচে’ স্বাভাবিক রূপবন্ধ। মিল্টনও না, সে মানুষের হৃদয়ের তুলনায় বড় বেশি জাঁকালো ; ওয়ার্ডসওয়ার্থও নয়, সে বড় সূক্ষ্ম আর অন্তর্লীন .... এমনকি দান্তেও নয় যদিও তিনি বাংলার এই মরমিয়া কবির খুব কাছাকাছি।”
দি টাইমস্-এর সুবিখ্যাত সাহিত্য-সাময়িকী যা টাইমস লিটারেরী সাপ্লিমেন্ট (টিএলএস) নামে খ্যাত তার ৭ নভেম্বর ১৯১২ সংখ্যায় (পৃ. ৪৯২) প্রকাশিত আলোচনাটিই প্রথম মুদ্রিত গ্রন্থালোচনা। তখনো রবীন্ত্রনাথ নোবেল পুরস্কার লাভ করেনি নি। আলোচনাটির শুরুতে বলা হয়েছে, "যে-কোনো শিল্পের অধোগতির কারণ হলো বিষয়-বস্তুর দীনতা, আর ব্যক্তিকেন্দ্রিকতার আদি স্তর থেকে সার্বজনীনতার পর্যায়ে উত্তরণের প্রয়োজনীয় মননশক্তি যদি না থাকে তাহলে কবিতা সবসময়ই এই দীনতায় আক্রান্ত হবে। যে-সমাজে ভাববাদিতা বিপুলভাবে বর্তমান, সে-সমাজে প্রাণময় শিল্প হিসেবে বেঁচে থাকতে হ’লে কবিতাকে উৎক্রান্তি সাধন করতেই হবে। তা’ না হ’লে, শিল্পের খাতিরে, কবি-শক্তি পর্যবসিত হবে অচল মননশীলতায়, ব্যর্থ হবে নিছক বিদগ্ধ ব্যতিরেকে অন্য কারো মনে সাড়া জাগাতে। ভাবকে জয় করতে না-পারলে ভাবের কাছে পর্যদুস্ত কাব্য পরিণত হ’বে গদ্যে। অতীতে কবিতা যেমন ঘটনা-আলোড়িত আবেগের বাহন হয়েছে, তেমনি (এখন) কবিতাকে লিখতে হবে কী ক’রে ফুটিয়ে তোলা যায় ভাবোৎসারিত আবেগ ; আর তা’ করতে যেয়ে কবিতাকে সেই কবিতাই থাকতে হ’বে যার রয়েছে প্রৌঢ় সাংগীতিকতা, উপমা-অলংকার আর নিষ্কম্প্র মূল্যবোধ। আর এই সমস্যাতেই এ যুগের কবিতা আক্রান্ত, এর অস্তিত্ব বিপন্ন; তাই অবাক হওয়ার কিছু নেই যে ইয়েটস সাহেব সেই ভারতীয় কবির রচনাকে সানন্দে সম্ভাষণ জানাবেন যিনি অনায়াসে ঐ সমস্যাটির সমাধান করেছেন বলে মনে হয়, যেভাবে হাজার বছর আগে চীনা চিত্রকলা রাহুমুক্ত হয়েছিল।"
এথেমিয়াম পত্রিকায় লেখা হয়েছিল, "তাঁর (রবীন্দ্রনাথের) কবিতামালায় এমন এক স্নিগ্ধ প্রশান্তি রয়েছে যার শিক্ষা পশ্চিমের অশান্ত-চিত্ত মানুষের বড় দরকার।"[১১]
টি. ডব্লু. রলেস্টন ১১০০ শব্দের দীর্ঘ প্রবন্ধে লিখেছিলেন, "জীবনের মৌল বিষয়ের সঙ্গে এই কবিতাগুলি এতো ঘনিষ্ঠভাবে সংশ্লিষ্ট যে এর চেতনা, এবং এমনকি, এর বাকপ্রতিমার একটি বিশ্বজনীন তাৎপর্য রয়েছে।[১২]
দি নেশান পত্রিকায় লেখা হয়েছিল, "ভুলে যাও ইয়েটস্-এর তদ্বির, ভুলে যাও যে ‘এটি সাহিত্য-বিশ্বের একটি শীর্ষ-ঘটনা’, এবং (তবু) গীতাঞ্জলি’তে পাবে প্রণয়াকুল হেমন্তের নিখাদ পুষ্পকোরক যাতে রয়েছে (মানুষের) সনাতন বিশ্বাসের ইঙ্গিত।[১৩]
নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তি
১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দে এই গ্রন্থের জন্য তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন। ইংরেজ লেখক এবং রয়্যাল সোসাইটির সদস্য স্টার্জ মুর নোবেল পুরস্কারের জন্য রবীন্দ্রনাথকে মনোনয়ন দিয়েছিলেন। এই মনোনয়ন সুইডিশ একাডেমীকে বিস্মিত করেছিল। তবে একাডেমীর সদস্য পার হলস্টর্ম রবীন্দ্রনাথের ব্যাপারে উৎসাহী ছিলেন। রবীন্দ্রনাথের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ফরাসি লেখক এমিল ফগ। তবে আরেকজন একাডেমী সদস্য ভার্নার লন হেইডেনস্টাম রবীন্দ্রনাথের পক্ষে প্রশস্তিপূর্ণ এমন জোরালো ও লিখিত বক্তব্য দেন যাতে সকল সংশয়ের অবসান হয় এবং রবীন্দ্রনাথকে নোবেল পুরস্কার দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দের ১০ নভেম্বর বুধবার সাহিত্যে নোবেল ঘোষণা করা হয়। পর দিন খবরটি ইংল্যান্ডের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় মুদ্রিত হয় ; কিন্তু তা বিলম্বে কলকাতায় পৌঁছে। ১৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় তারবার্তার মাধ্যমে খবর আসে যে রবীন্দ্রনাথকে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে। গীতাঞ্জলি (১৯১২) সহ সেই সময় সামান্য যে কিছু রবীন্দ্ররচনার অনুবাদ পাশ্চাত্য পাঠক মহলে পরিচিতি লাভ করেছিল, পুরস্কারের ঘোষণাপত্রে সেসবের ভূয়সী প্রশংসা করে সুইডিশ আকাদেমি।
পাদটীকা
- ↑ গীতাঞ্জলি মূল পাণ্ডুলিপির প্রতিলিপি, প্রকাশক =দেবজ্যোত দত্ত, শিশু সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, ডিসেম্বর-২০১১পৃষ্ঠা=১৭৯ আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৮৩-৭
- ↑ Gitanjali। Shree Bharati Press Hiranmay Saha, Kolkata। ২০১৪। পৃষ্ঠা 15। আইএসবিএন 978-81-9282-760-5।
- ↑ "Welcome to Metro Railway, Kolkata"। Ontrack Systems। ২০ আগস্ট ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুন ২৯, ২০১১।
- ↑ "UrbanRail.net > Asia > India > West Bengal > Kolkata (Calcutta) Metro"। UrbanRail.net। ২৯ জুন ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুন ২৯, ২০১১।
- ↑ প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়, রবীন্দ্রজীবনকথা, পৃ. ৭৫-৭৭
- ↑ সুকুমার সেন, বাঙ্গালা সাহিত্যের ইতিহাস, চতুর্থ খণ্ড, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাঃ লিঃ, কলকাতা, ১৯৯৬ সং, পৃ. ১১০
- ↑ প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়, রবীন্দ্রজীবনকথা, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাঃ লিঃ, কলকাতা, ১৩৮৮ সং, পৃ. ৭৫
- ↑ Tagore 1977, পৃ. 5
- ↑ এ.টম্পসন : রবীন্দ্রনাথ ট্যাগোর - পোয়েট এন্ড ড্রামাটিস্ট, ১৯২৬, পৃ. ৪৫, ৪৯-৫১
- ↑ এ.টম্পসন : রবীন্দ্রনাথ ট্যাগোর - পোয়েট এন্ড ড্রামাটিস্ট, ১৯২৬, পৃ. ২৩১
- ↑ এথেমিয়াম, নম্বর-৪৪৫৮, এপ্রিল ৫, ১৯১৩, পৃ. ৩৮২।
- ↑ হিবার্ট জর্নাল, বস্টন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, এপ্রিল, ১৯১৩, পৃ. ৬৯২
- ↑ দি নেশান, নিউ ইয়র্ক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, মে ১৫, ১৯১৩, পৃ. ৫০০
বহিঃসংযোগ
এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |