ক্রিস্টিয়ান ডি দুভ
ভাইকাউন্ট দে দুভ | |
---|---|
জন্ম | ক্রিশ্চিয়ান রেনে মেরি জোসেফ দে দুভ ২ অক্টোবর ১৯১৭ |
মৃত্যু | ৪ মে ২০১৩ | (বয়স ৯৫)
জাতীয়তা | বেলজিয়ান |
নাগরিকত্ব | বেলজিয়ান |
মাতৃশিক্ষায়তন |
|
পরিচিতির কারণ | কোষীয় অঙ্গাণুসমূহ |
দাম্পত্য সঙ্গী | জেনিন হারম্যান (বি. ১৯৪৩; মৃ. ২০০৮) |
সন্তান |
|
পুরস্কার | |
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন | |
কর্মক্ষেত্র | |
প্রতিষ্ঠানসমূহ |
ক্রিশ্চিয়ান রেনে মেরি জোসেফ, ভাইকাউন্ট দে দুভ (২ অক্টোবর ১৯১৭ - ৪ মে ২০১৩) ছিলেন একজন নোবেল বিজয়ী ইংল্যান্ডে জন্মানো বেলজিয়ান কোষতত্ত্ববিদ ও প্রাণ-রসায়নবিদ।[২][৩] পারঅক্সিসোম ও লাইসোসোম নামক দুটি কোষীয় অঙ্গাণু আবিষ্কারের জন্য তিনি ১৯৭৪ সালে অ্যালবেয়ার ক্লুদ ও জর্জ ই. পালাদে এর সাথে যৌথভাবে (কোষের গাঠনিক ও ক্রিয়াকলাপ কাঠামো সংক্রান্ত আবিষ্কারের জন্য), শারীরতত্ত্ব বা চিকিৎসাবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন।[৪] পারঅক্সিসোম ও লাইসোসোম ছাড়াও, তিনি একই সাথে অটোফেজি (autophagy, বাংলা: আত্মভক্ষণ) এন্ডোসাইটোসিস (endocytosis), এবং এক্সোসাইটোসিস (exocytosis) এই বৈজ্ঞানিক নামগুলোর প্রবর্তন করেন।[৫][৬][৭][৮][৯]
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়কালে বেলজিয়ান শরণার্থীর সন্তান, দে দুভ এর জন্ম হয় টেমস ডিটন, সারে, ইংল্যান্ডে।[১০]
তার পরিবার ১৯২০ সালে বেলজিয়ামে ফিরে যায়। তিনি অ্যান্টওয়ার্পের অন্জে-লিভে-ভ্রুকলেজ (Onze-Lieve-Vrouwecollege, ইংরেজি:Our Lady College) এর জেসুইটগণের কাছে পড়াশুনা করেন, এবং লুভাঁ ক্যাথোলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাবিদ্যা অধ্যয়ন করেন। ১৯৪১ সালে এমডি ডিগ্রি অর্জনের পর, তিনি রসায়ন গবেষণায় নিযুক্ত হন, এবং বহুমূত্র রোগে ইনসুলিনের ভূমিকা নিয়ে কাজ শুরু করেন। তার এই গবেষণা ১৯৪৫ সালে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ খেতাব agrégation de l'enseignement supérieur (আক্ষরিক অর্থ: উচ্চশিক্ষার সর্বোচ্চ খেতাব; পিএইচডি এর সমতুল্য) এনে দেয়।[১১]
১৯৪৬ সালে পেনিসিলিন বিশুদ্ধিকরণে তার কাজের জন্য তিনি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি এরপর স্টকহোমের ক্যারোলিনস্কা ইন্সটিটিউটের হুগো থিওরেল (পরবর্তীকালে নোবেল বিজয়ী), এবং সেইন্ট লুইসের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্ল ও গার্টি কোরি’র অধীনে উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য যান। ১৯৪৭ সালে তিনি লুভাঁ'র চিকিৎসা অনুষদে যোগদান করেন। ১৯৬০ সালে তাকে রকাফেলার ইন্সটিটিউটে (বর্তমানে রকাফেলার বিশ্ববিদ্যালয়) আমন্ত্রণ জানানো হয়। লুভাঁ'র সাথে পারস্পরিক সমঝোতায়, তিনি ১৯৬২ সাল থেকে উভয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হন, এবং লুভাঁ ও নিউ ইয়র্কে পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৫ সালে তিনি লুভাঁ বিশ্ববিদ্যালয়ের, এবং ১৯৮৮ সালে রকাফেলার এর এমেরিটাস অধ্যাপক নিযুক্ত হন।[১২]
দে দুভ, বেলজিয়ামের রাজা বুদোয়াঁ কর্তৃক, ১৯৮৯ সালে ভাইকাউন্ট এর পদমর্যাদায় ভূষিত হন। এছাড়াও তিনি ফ্রাঁকি পুরস্কার, গার্ডনার ফাউন্ডেশন আন্তর্জাতিক পুরস্কার, হাইনেকেন পুরস্কার, এবং ই.বি. উইলসন পদকে ভূষিত হন। তিনি ১৯৭৪ সালে ব্রাসেলসে, আন্তর্জাতিক কোষীয় ও আণবিক রোগতত্ত্ব ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠা করেন, ২০০৫ সালে যা ‘দে দুভ ইন্সটিটিউট’- হিসেবে নামকরণ করা হয়। ল’রিয়াল-ইউনেস্কো বিজ্ঞানে নিয়োজিত নারী পুরস্কার – এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি।[১৩]
বাল্যকাল ও শিক্ষা
[সম্পাদনা]লন্ডনের নিকটবর্তী টেমস ডিটন গ্রামে, গৃহায়ণ প্রতিনিধি অ্যালফন্স দে দুভ এবং তার স্ত্রী ম্যাডেলিন পুংস এর ঘরে জন্ম হয় দে দুভ এর। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সূচনালগ্নে, তার পিতামাতা বেলজিয়াম ছেড়ে পালিয়ে আসেন। যুদ্ধশেষে ১৯২০ সালে, তিন বছর বয়সে, তিনি ও তার পরিবার বেলজিয়ামে ফিরে যান। তিনি অকালপক্ব ছেলে ছিলেন, সবসময় স্কুলের সেরা ছাত্র (তার স্মৃতি অনুসারে primus perpetuus) ছিলেন, শুধুমাত্র এক বছর বাদে যখন অন্য শিক্ষার্থীদের সুযোগ দেওয়ার জন্য তাকে “প্রতিযোগিতার বাইরে” ঘোষণা করা হয়।[২]
১৯৩৪ সালে লুভাঁ ক্যাথোলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের পূর্বে, তিনি অ্যান্টওয়ার্পের অন্জে-লিভে-ভ্রাউ ইনস্টিটিউটে (Onze-Lieve-Vrouwinstituut) এ জেসুইটগণ কর্তৃক শিক্ষালাভ করেন।[১৪] তিনি একজন অন্তঃক্ষরাগ্রন্থি বিশেষজ্ঞ হতে চেয়েছিলেন, এজন্য তিনি বেলজিয়ান শারীরতত্ত্ববিদ জোসেফ পি. বুকার্ট এর গবেষণাগারে যোগদান করেন, যার প্রাথমিক গবেষণা ছিল একটি ইনসুলিন নিয়ে।[১৫]
১৯৪০ সালে তিনি মেডিক্যাল স্কুলের শেষবর্ষে থাকাকালীন, জার্মানরা বেলজিয়াম দখল করে। তাকে বেলজিয়ান সেনাবাহিনীতে তালিকাভুক্ত করা হয়, এবং চিকিৎসা কর্মকর্তা হিসেবে দক্ষিণ ফ্রান্সে নিযুক্ত করা হয়। সেখানে, প্রায় তাৎক্ষণিকভাবেই তিনি জার্মানদের হাতে যুদ্ধবন্দি হিসেবে আটক হন। অনর্গল জার্মান ও ফ্লেমিশ ভাষায় কথা বলার দক্ষতার কারণে তিনি তার বন্দিকর্তাদের বোকা বানাতে সক্ষম হন। তিনি এক রোমাঞ্চকর অভিযানের মাধ্যমে বেলজিয়ামে ফিরে যান, যাকে পরবর্তীকালে তিনি “বীরত্বপূর্ণের চেয়ে বরং কৌতুকপ্রদই বেশি” বলে অভিহিত করেন।[১১]
তিনি তৎক্ষণাৎ তার চিকিৎসা শিক্ষা চালিয়ে যান, এবং ১৯৪১ সালে লুভাঁ থেকে এমডি ডিগ্রি অর্জন করেন। স্নাতক হওয়ার পর দে দুভ, ইনসুলিন ও গ্লুকোজ বিপাকে এর ভূমিকা নিয়ে তার গবেষণা চালিয়ে যান। তিনি (আর্ল সাদারল্যান্ডের সাথে) প্রাথমিকভাবে আবিষ্কার করেন যে, বাণিজ্যিকভাবে প্রস্তুত ইনসুলিন, গ্লুকাগন নামক অগ্ন্যাশয়েরই আরেকটি হরমোন যা ইনসুলিন-বিরোধী, তা দ্বারা দূষিত।[১৫]
যাই হোক, লুভাঁয় গবেষণাগার রসদের ঘাটতি ছিল, এ কারণে তিনি ক্যানসার ইনস্টিটিউটে রসায়নে ডিগ্রি অর্জনের উদ্দেশ্যে ভর্তি হন। ১৯৪৫ সালে ব্রাসেলস ও প্যারিসে যুগপৎভাবে, ইনসুলিন নিয়ে তার গবেষণার সংকলন Glucose, Insuline et Diabète (গ্লুকোজ, ইনসুলিন এবং বহুমূত্র)- নামক ৪০০ পৃষ্ঠার একটি বইয়ের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এই বইয়ের সংক্ষিপ্তসার থেকে রচিত গবেষণামূলক নিবন্ধ ১৯৪৫ সালে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের সর্বোচ্চ খেতাব agrégation de l'enseignement supérieur (পিএইচডি এর সমতুল্য – তিনি একে “অনেকটা গৌরবান্বিত পিএইচডি” বলে আখ্যা দেন) এনে দেয়।[১১] তিনি এই গবেষণাতত্ত্বের পর বেশ কয়েকটি বৈজ্ঞানিক নিবন্ধ প্রকাশ করেন।[১৬]
এরপর ১৯৪৬ সালে তিনি রসায়নে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন, যার জন্য তিনি পেনিসিলিন বিশুদ্ধিকরণ নিয়ে কাজ করেন।[১৭]
প্রাণরসায়নে নিজের দক্ষতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে, তিনি ১৯৪৬-৪৭ সালে ১৮ মাসব্যাপী স্টকহোমের নোবেল চিকিৎসা ইনস্টিটিউটে, হুগো থিওরেলের (যিনি পরবর্তীকালে ১৯৫৫ সালে শারীরতত্ত্ব/চিকিৎসাবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার লাভ করেন) গবেষণাগারে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। তিনি রকাফেলার ফাউন্ডেশন ফেলো হিসেবে আর্থিক ভাতা লাভ করেন, এবং কার্ল ও গার্টি কোরি’র অধীনে (স্বামী-স্ত্রী দম্পতি, ১৯৪৭ সালে যুগ্মভাবে শারীরতত্ত্ব/চিকিৎসাবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার পান) সেইন্ট লুইসের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছয় মাস কাজ করেন।[১৮]
পেশাদার জীবন ও গবেষণা
[সম্পাদনা]মার্চ ১৯৪৭ সালে, লুভাঁ বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা অনুষদে শারীরবৃত্তীয় রসায়নের শিক্ষক হিসেবে দে দুভ যোগদান করেন। ১৯৫১ সালে তিনি পূর্ণাংগ অধ্যাপকের পদমর্যাদায় উন্নীত হন। ১৯৬০ সালে, নিউ ইয়র্ক শহরের রকাফেলার ইনস্টিটিউট (বর্তমানে রকাফেলার বিশ্ববিদ্যালয়) এর তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডেটলেভ ব্রঙ্ক, তার সাথে ব্রাসেলসে সাক্ষাৎ করেন, এবং তাকে অধ্যাপনা ও তার সাথে নিজস্ব গবেষণাগারের প্রস্তাব দেন। পাছে দে দুভ পুরোপুরি হাতছাড়া হয়ে যায় এই ভয়ে, লুভাঁ'র অধ্যক্ষ নৈশভোজে দে দুভের সাথে সমঝোতা করেন যে, দে দুভ খণ্ডকালীন নিয়োগপ্রাপ্ত হিসেবে থাকবেন এবং শিক্ষকতার দায়িত্ব লাঘব করে গবেষণা চালিয়ে যাবেন। অধ্যক্ষ ও ব্রঙ্কের মধ্যে সমঝোতা হয়, যা প্রাথমিকভাবে পাঁচ বছরকাল স্থায়ী হয়। আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়েছিল ১৯৬২ সালে, এবং দে দুভ যুগপৎভাবে লুভাঁ এবং রকাফেলার বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগারের প্রধান হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন, এবং পালাক্রমে লুভাঁ ও নিউ ইয়র্কে সময় দিতেন।[১৯]
১৯৬৯ সালে, লুভাঁ ক্যাথোলিক বিশ্ববিদ্যালয় বিভক্ত হয়ে দুটি পৃথক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়। তিনি ফরাসি ভাষার বিশ্ববিদ্যালয় Université catholique de Louvain -তে যোগদান করেন। তিনি ১৯৮৫ সালে লুভাঁ বিশ্ববিদ্যালয়ে এমেরিটাস অধ্যাপক হন এবং ১৯৮৮ সালে রকাফেলার এর, যদিও তিনি তখনো গবেষণা চালিয়ে গেছেন। অন্যান্য বিষয়াবলির মধ্যে, তিনি হার-বলয় কেন্দ্রীকরণ (rate-zonal centrifugation) ব্যবহার করে, ইঁদুরের যকৃত কোষে উৎসেচক (enzymes) বণ্টন নিয়েও গবেষণা করেন। কোষ ভগ্নাংশকরণে তার কাজ থেকে কোষ কাঠামোর ক্রিয়াকলাপ সম্পর্কে সম্যক ধারণা পাওয়া যায়। উপকোষীয় প্রাণরসায়ন ও কোষ জীববিদ্যায় তিনি পারদর্শী ছিলেন এবং নতুন কোষীয় অঙ্গাণু আবিষ্কার করেন।[২০][২১][২২][২৩][২৪][২৫][২৬][২৭][২৮][২৯][৩০][৩১][৩২][৩৩]
গ্লুকাগন পুনরাবিষ্কার
[সম্পাদনা]১৯২৩ সালে অগ্ন্যাশয়ের নিঃসরণ থেকে হাইপারগ্লাইসেমিক (রক্তচাপ-বর্ধক) পদার্থ হিসেবে, সি.পি. কিম্বল ও জন আর. মার্লিন কর্তৃক গ্লুকাগন আবিষ্কৃত হয়।[৩৪]
গ্লুকাগনের জৈবিক গুরুত্ব জানা ছিল না এবং এর নামটাই এক প্রকার বিস্মৃত হয়ে গিয়েছিল। যখন দে দুভ বুকার্টের সাথে লুভাঁ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনসুলিন নিয়ে কাজ করতে যোগ দেন, তখনো এটা একটা রহস্যই ছিল। ১৯২১ সাল থেকে ইনসুলিন ছিল প্রথম বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত হরমোন, যা শুরুতে এলি লিলি এন্ড কোম্পানি কর্তৃক উৎপাদিত হতো, কিন্তু তাদের সংশ্লেষণ পদ্ধতির কারণে এতে এক প্রকার অপদ্রব্য মিশ্রিত হয়ে, তা মৃদু হাইপারগ্লাইসেমিয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়, যা ছিল প্রত্যাশিত প্রতিক্রিয়ার একেবারে বিপরীত। মে ১৯৪৪ সালে দে দুভ অনুধাবন করেন যে, কেলাসকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই অপদ্রব্য দূর করা সম্ভব। ইঁদুরের শরীরে লিলি ইনসুলিন প্রবেশ করালে প্রাথমিকভাবে হাইপারগ্লাইসেমিয়া সৃষ্টি করে, কিন্তু ড্যানিশ নভো ইনসুলিন প্রবেশ করালে তা হয় না – এটা প্রদর্শনের মাধ্যমে তিনি দেখান যে, লিলি ইনসুলিনের প্রস্তুত প্রক্রিয়া আসলে দূষিত ছিল। ১৯৪৭ সালে তার গবেষণা প্রকাশিত হওয়ার পর, লিলি অপদ্রব্য দূরীকরণের জন্য তাদের সংশ্লেষণ প্রক্রিয়া সংশোধন করে।[৩৫] ততদিনে দে দুভ কার্ল কোরি ও গার্টি কোরি’র অধীনে সেইন্ট লুইসের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন, যেখানে তিনি সতীর্থ গবেষক আর্ল উইলবার সাদারল্যান্ড জুনিয়রের সাথে কাজ করেন, যিনি পরবর্তীকালে ১৯৭১ সালে শারীরতত্ত্ব বা চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন।[১৫]
সাদারল্যান্ড তখন ইনসুলিন-অপদ্রব্য পদার্থের ধাঁধা নিয়েই কর্মরত ছিলেন, যার নাম তিনি দিয়েছিলেন হাইপারগ্লাইসেমিক–গ্লাইকোজেনোলাইটিক (HG) ফ্যাক্টর। তিনি ও দে দুভ শীঘ্রই আবিষ্কার করেন যে, HG ফ্যাক্টর শুধুমাত্র অগ্ন্যাশয় দ্বারাই নয়, বরং গ্যাস্ট্রিক মিউকোসা ও পৌষ্টিক নালীর অন্যান্য কয়েকটি নির্দিষ্ট অংশ দ্বারাও সংশ্লেষিত হয়। এছাড়াও তারা আবিষ্কার করেন যে, হরমোনটি অগ্ন্যাশয়িক আইলেটস থেকে তৈরি হয়, যার কোষগুলো ইনসুলিন-উৎপাদক বেটা কোষ থেকে আলাদা; সেগুলো আলফা কোষ বলে ধারণা করা হয়। দে দুভ-ই অনুধাবন করেন যে, সাদারল্যান্ডের HG ফ্যাক্টর আর গ্লুকাগন প্রকৃতপক্ষে একই; এই পুনরাবিষ্কার এর নামকে স্থায়ীত্ব দান করে, ১৯৫১ সালে যার পুনঃপরিচয় ঘটে দে দুভ এর মাধ্যমে। এই জুটি আরও দেখান যে, গ্লুকাগনই হচ্ছে যকৃতে গ্লাইকোজেন এর ভাঙনে প্রধান প্রভাবক- যে প্রক্রিয়াটি গ্লাইকোজেনেসিস নামে পরিচিত- এর মাধ্যমে আরও শর্করা উৎপন্ন হয় এবং তা রক্তে বিমুক্ত হয়।[৩৬]
গিনিপিগ এর দেহে নির্বাচিতভাবে কোবাল্ট দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ আলফা কোষ গ্লুকাগন উৎপাদন বন্ধ করে দেয়[৩৭]- এটা প্রদর্শনের মাধ্যমে, গ্লুকাগন অগ্ন্যাশয়িক আলফা কোষ থেকে উৎপন্ন হয় বলে দে দুভের যে প্রাথমিক প্রস্তাবনা ছিল, তা প্রমাণিত হয়; তিনি ১৯৫৩ সালে অবশেষে বিশুদ্ধীকৃত হরমোন পৃথক করতে সক্ষম হন,[৩৮] যার মধ্যে পাখিদের হরমোনও অন্তর্ভুক্ত ছিল।[৩৯][৪০][৪১][৪২]
দে দুভই ছিলেন প্রথম যিনি ধারণা করেন যে, ইনসুলিন (যা রক্তে শর্করার মাত্রা হ্রাস করে) এর উৎপাদন, যকৃতে গ্লুকোজ শোষণের উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে; তিনি আরও প্রস্তাব করেন যে ইনসুলিন এবং গ্লুকাগন উৎপাদনের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার জন্য কোন একটি কৌশল বিদ্যমান থাকে, যা রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিক রাখে ( দেখুন হোমিওস্টেসিস )। এই ধারণাটি ঐ সময়ে খুব বিরোধীতার সম্মুখীন হলেও গ্লুকাগনের পুনরাবিষ্কার তার তত্ত্ব নিশ্চিত করে। ১৯৫৩ সালে তিনি পরীক্ষামূলকভাবে দেখান যে, গ্লুকাগন আসলেই গ্লুকোজ উৎপাদনকে (এবং সেই সাথে শোষণ) প্রভাবিত করে।[৪৩][৪৪]
লাইসোসোম আবিষ্কার
[সম্পাদনা]ক্রিশ্চিয়ান দে দুভ এবং তার দল যকৃতে ইনসুলিনের ক্রিয়া-কৌশল নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যান, তাদের মনোযোগ ছিল গ্লুকোজ ৬-ফসফাটেজ (G6P) এনজাইমের ওপর, যা শর্করা বিপাকের (গ্লাইকোলাইসিস) ক্ষেত্রে একটি অত্যাবশ্যক এনজাইম এবং ইনসুলিনের লক্ষ্যবস্তু। তারা আবিষ্কার করেন যে, রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে মুখ্য এনজাইম হচ্ছে G6P,[৪৫][৪৬] কিন্তু বারবার পরীক্ষা পুনরাবৃত্তির পরও, তারা কোষীয় নির্যাস থেকে এনজাইমটির বিশুদ্ধীকরণ ও পৃথকীকরণে ব্যর্থ হন। এ কারণে এনজাইমটির ক্রিয়া শনাক্ত করতে তারা আরও শ্রমসাধ্য প্রক্রিয়া কোষ অংশীকরণ (cell fractionation) অবলম্বন করেন।[৪৭]
এটাই ছিল সেই অপ্রত্যাশিত শুভক্ষণ। এনজাইমের যথার্থ ক্রিয়া নির্ণয়ের জন্য, দলটি একটি প্রমিত এনজাইম অ্যাসিড ফসফাটেজ ব্যবহার করে একটি পদ্ধতি অবলম্বন করে; কিন্তু তাদের শনাক্তকৃত ক্রিয়াকলাপ ছিল অপ্রত্যাশিত রকমের কম- খুবই কম; প্রত্যাশিত মানের ১০% এর কাছাকাছি। এরপর একদিন তারা পাঁচ দিন ধরে সংরক্ষিত কিছু বিশুদ্ধিকৃত কোষ ভগ্নাংশের ক্রিয়াকলাপ পরিমাপ করেন। তারা বিস্মিতভাবে লক্ষ্য করেন যে, এনজাইমের ক্রিয়া বৃদ্ধি পেয়ে আবার নতুন নমুনাসমূহের মাত্রায় উন্নীত হয়েছে; এবং প্রতিবার পুনরাবৃত্তির ক্ষেত্রেই একই রকম ফলাফল পাওয়া যায়। এই পর্যবেক্ষণের কারণে প্রস্তাব করা হয় যে, কোন একটা প্রতিবন্ধকতার কারণে ভিত্তিস্তরে (substrate) এনজাইমের দ্রুত প্রবেশ সীমাবদ্ধ থাকে, যার ফলে একটা নির্দিষ্ট সময় পার হবার পরই কেবল এনজাইমগুলোর ব্যাপন ঘটে। তারা এই প্রতিবন্ধকতাকে “ঝিল্লি দ্বারা পরিবেষ্টিত ও অ্যাসিড ফসফাটেজ ধারণকারী একটি থলের ন্যায় কাঠামো ”- বলে আখ্যা দেন।[৪৮][৪৯]
ঝিল্লিযুক্ত ভগ্নাংশ, যেগুলো কোষীয় অঙ্গাণু বলে পরিচিত, সেখান থেকে একটি সম্পর্কহীন এনজাইম (কোষ অংশীকরণ প্রক্রিয়ার সাথে) পাওয়া যায়। এদের পরিপাকীয় বৈশিষ্ট্যের সাথে সঙ্গতি রেখে, ১৯৫৫ সালে দে দুভ এদের নাম দেন “লাইসোসোম”।[৫০] ঐ একই বছরে ভারমন্ট বিশ্ববিদ্যালয় এর অ্যালেক্স বি. নভিকফ, দে দুভ এর গবেষণাগার পরিদর্শনে যান, এবং ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপি ব্যবহার করে সফলভাবে লাইসোসোম অঙ্গাণুটির প্রথম দৃশ্যমান প্রমাণ সংগ্রহ করেন। এছাড়াও অ্যাসিড ফসফাটেজের জন্য একটি রঞ্জক পদ্ধতি ব্যবহার করে, দে দুভ ও নভিকফ লাইসোসোমের পানিগ্রাহী এনজাইমের (অ্যাসিড হাইড্রোলেজ) অবস্থান নিশ্চিত করেন।[২১][৫১]
পারঅক্সিসোম আবিষ্কার
[সম্পাদনা]অপ্রত্যাশিত সৌভাগ্য দে দুভকে আরও একটি বড় আবিষ্কারের দিকে নিয়ে যায়। লাইসোসোমের অস্তিত্ব নিশ্চিতকরণের পর, দে দুভ এর দলের দুশ্চিন্তা ছিল ইউরেট অক্সিডেজ নামক এনজাইমের উপস্থিতি (ইঁদুরের যকৃত কোষ ভগ্নাংশে)। দে দুভ ভেবেছিলেন যে সেটা লাইসোসোম নয় কেননা, এনজাইমটি লাইসোসোমের গতানুগতিক এনজাইম অ্যাসিড হাইড্রোলাসেস নয়; তথাপি এর বণ্টন ছিল অ্যাসিড ফসফাটেজ এনজাইমের মতই। এরপর ১৯৬০ সালে তিনি অন্যান্য কয়েকটি এনজাইম (যেমন- ক্যাটালেজ ও ডি-অ্যামিনো অ্যাসিড অক্সিডেজ) আবিষ্কার করেন, কোষীয় ভগ্নাংশের মধ্যে যাদের বণ্টনও একই রকমের ছিল, এবং ধারণা করা হয়েছিল এগুলো মাইটোকন্ড্রিয়ার এনজাইম ছিল।[৫২] (ডাব্লিউ বার্নাড ও সি. র্যুইয়েঁ এমন বহিঃমাইটোকন্ড্রীয় অঙ্গাণুগুলোকে মাইক্রোবডি) নাম দেন)।[৫৩] দে দুভ উল্লেখ করেন যে, এনজাইম তিনটি সাদৃশ্যপূর্ণ রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে এবং তা পারঅক্সাইড-প্রস্তুতকারী অক্সিডেজ এনজাইমগুলোর মত।[৫৪]
নব্য-আবিষ্কৃত এনজাইমগুলোকে মাইক্রোবডি হিসেবে আখ্যা দেওয়ার ব্যাপারে দে দুভ বেশ সন্দিগ্ধ ছিলেন কেননা, তার ভাষ্যমতে, “তাদের এনজাইম পরিপূরক এবং যকৃত কোষের শারীরবৃত্তিতে তাদের ভূমিকা সম্পর্কিত জ্ঞান খুবই সামান্য, যাতে করে এই মুহূর্তে কোন চূড়ান্ত প্রস্তাবনা দেওয়া যায়।”[৫৫] তার ধারণা মতে, এই এনজাইমগুলো একই কোষীয় অঙ্গাণুতে অবস্থিত, কিন্তু ইতোমধ্যে জ্ঞাত অঙ্গাণুগুলো থেকে তা ভিন্ন।[২১] কিন্তু যেহেতু কোন জোরালো প্রমাণ ছিল না, তাই তিনি নিজের এই তত্ত্ব প্রকাশ করেননি। ১৯৫৫ সালে তার দল একই জৈবরাসায়নিক ধর্মাবলি প্রদর্শনকারী, সিলিয়াযুক্ত (চুল/লোমের ন্যায় অঙ্গাণু) এককোষী টেট্রাহাইমেনা পাইরিফরমিস (Tetrahymena pyriformis) এর কোষীয় ভগ্নাংশে উপস্থাপন করে; এতে বোঝা যায় যে, ঐ কণাগুলো মাইটোকন্ড্রিয়ার সাথে সম্পর্কহীন ভিন্ন একটি অবর্ণিত কোষীয় অঙ্গাণু। ১৯৫৫ সালে আমেরিকান কোষ জীববিদ্যা সমিতি’র এক সভায় তিনি নিজের এই আবিষ্কার তুলে ধরেন,[৫৬] এবং ১৯৬৬ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে তা প্রকাশ করেন, যেখানে অঙ্গাণুগুলোকে পারঅক্সিডেজ এর বিক্রিয়ার সাথে জড়িত থাকার কারণে পারঅক্সিসোম হিসেবে নামকরণ করেন।[৫৭] ১৯৬৮ সালে তিনি প্রথমবারের মত বৃহৎ পরিসরে পারঅক্সিসোম প্রস্তুত করতে সক্ষম হন এবং নিশ্চিত করেন যে, ১-a হাইড্রক্সিঅ্যাসিড অক্সিডেজ, ডি-অ্যামিনো অ্যাসিড অক্সিডেজ, এবং ক্যাটালেজ – সবগুলোই পারঅক্সিসোম এর অনন্য এনজাইম।[৫৮][৫৯]
দে দুভ এবং তার দল আরও দেখান যে, পারঅক্সিসোম বিপাক ক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যার মধ্যে মাইটোকন্ড্রিয়া থেকে ভিন্ন পথে সংঘটিত, অতি-বৃহৎ শৃঙ্খলবিশিষ্ট ফ্যাটি অ্যাসিডের -জারণও অন্তর্ভুক্ত; এবং এগুলো বিবর্তনজনিত কারণে পরস্পর সম্বন্ধযুক্ত একটি বড় অঙ্গাণু গোত্রের অন্তর্ভুক্ত, উদ্ভিদ ও প্রোটোজোয়া-সহ নানা বৈচিত্র্যপূর্ণ কোষের মধ্যে যাদের উপস্থিতি এবং সুনির্দিষ্ট ভূমিকা রয়েছে (এবং তাদের নামও সুনির্দিষ্ট, যেমন- গ্লাইঅক্সিসোম ও গ্লাইকোসোম)।[১৫][৬০][৬১]
কোষের উৎপত্তি
[সম্পাদনা]দে দুভের কাজ অন্তঃমিথোজীবিতা তত্ত্ব (endosymbiotic theory) গ্রহণের প্রতি ঐকমত্য গড়ে তুলতে অবদান রাখে; যেখানে প্রস্তাব করা হয় যে, সুকেন্দ্রিক (eukaryotic) কোষের অঙ্গাণুসমূহের উৎপত্তি ঘটার কারণ হচ্ছে কতিপয় প্রাক-কেন্দ্রিক (prokaryotic) কোষ অন্তঃমিথোজীবী হিসেবে সুকেন্দ্রিক কোষের অভ্যন্তরে বাস করতে শুরু করে। দে দুভ এর ভাষ্যমতে, সুকেন্দ্রিক কোষের কাঠামো ও বৈশিষ্ট্যাবলি, যার মধ্যে এন্ডোসাইটোসিস এর মাধ্যমে খাদ্য গ্রহণ ও তা অন্তঃকোষীয়ভাবে পরিপাকও অন্তর্ভুক্ত, প্রথমে তার বিকাশ ঘটে। পরবর্তীকালে, আদিকেন্দ্রিক কোষ যুক্ত হয়ে আরও অঙ্গাণু গঠিত হয়।[৬২]
দে দুভ প্রস্তাব করেন যে পারঅক্সিসোম, যেগুলো আদি-ভূমণ্ডলীয় পরিবেশে ক্রমবর্ধমান মুক্ত আণবিক অক্সিজেনের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে সহায়তা করে, সেটাই সম্ভবত প্রথম অন্তঃমিথোজীবী। যেহেতু পারঅক্সিসোমের নিজস্ব কোন ডিএনএ নেই, মাইটোকন্ড্রিয়া ও ক্লোরোপ্লাস্ট এর ক্ষেত্রে একই রকমের দাবির তুলনায় এই প্রস্তাবনার পক্ষে প্রমাণ বেশ কম।[৬৩][৬৪] তিনি তার পরবর্তী জীবনের অধিকাংশই ব্যয় করেছেন জীবনের উৎপত্তি বিষয়ক গবেষণায়, যেটা তখনো অনেকটাই অনুমান-নির্ভর বলে তিনি স্বীকার করেন (দেখুন থিওএস্টার (thioester))।[৬৫][৬৬]
প্রকাশনা
[সম্পাদনা]দে দুভ কারিগরি ও জনপ্রিয়- উভয় ঘরানাতেই একজন স্বনামধন্য লেখক ছিলেন। তার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কাজগুলো হচ্ছে:
- A Guided Tour of the Living Cell (1984) আইএসবিএন ০-৭১৬৭-৫০০২-৩
- La cellule vivante, une visite guidée, Pour la Science (1987) আইএসবিএন ৯৭৮-২-৯০২৯১৮-৫২-২
- Construire une cellule, Dunod (1990) আইএসবিএন ৯৭৮-২-৭২৯৬-০১৮১-২
- Blueprint for a Cell: the Nature and Origin of Life (1991) আইএসবিএন ০-৮৯২৭৮-৪১০-৫
- Poussière de vie, Fayard (1995) আইএসবিএন ৯৭৮-২-২১৩-৫৯৫৬০-৩
- Vital Dust: Life as a Cosmic Imperative (1996) আইএসবিএন ০-৪৬৫-০৯০৪৫-১
- Life Evolving: Molecules, Mind, and Meaning (2002) আইএসবিএন ০-১৯-৫১৫৬০৫-৬
- À l’écoute du vivant, éditions Odile Jacob, Paris (2002) আইএসবিএন ২-৭৩৮১-১১৬৬-১
- Singularities: Landmarks on the Pathways of Life (2005) আইএসবিএন ৯৭৮-০-৫২১-৮৪১৯৫-৫
- Singularités: Jalons sur les chemins de la vie, éditions Odile Jacob (2005) আইএসবিএন ৯৭৮-২-৭৩৮১-১৬২১-৫
- Science et quête de sens, Presses de la Renaissance, (2005) আইএসবিএন ৯৭৮-২-৭৫০৯-০১২৫-৭
- Génétique du péché originel. Le poids du passé sur l’avenir de la vie, éditions Odile Jacob (2009) আইএসবিএন ৯৭৮-২-৭৩৮১-২২১৮-৬
- Genetics of Original Sin: The Impact of Natural Selection on the Future of Humanity (2010) আইএসবিএন ৯৭৮-০-৩০০১-৬৫০৭-৪
- De Jesus a Jesus... en passant par Darwin, éditions Odile Jacob (2011) আইএসবিএন ৯৭৮-২-৭৩৮১-২৬৮১-৮
ব্যক্তিজীবন
[সম্পাদনা]ধর্ম বিশ্বাস
[সম্পাদনা]দে দুভ একজন রোমান ক্যাথোলিক হিসেবে বড় হন। পরবর্তী জীবনে তিনি অজ্ঞেয়বাদের দিকেই ঝুঁকে পড়েন, যদি না তা কঠোর নিরীশ্বরবাদ হয়ে থাকে।[৬৭][৬৮]
তা সত্বেও, দে দুভ বিশ্বাস করতেন যে, “অধিকাংশ জীববিজ্ঞানীই, আজকের দিনে, জীবন ও মনকে মহাজাগতিকভাবে অবিচ্ছেদ্য হিসেবেই দেখেন, যা মহাবিশ্বের মজ্জায় নিবিড়ভাবে প্রোথিত; নিয়তির অনন্যসাধারণ কোন অসম্ভাব্য পরিণতি হিসেবে নয়।”[৬৯] মৃত্যুর মাত্র মাসখানেক আগে তিনি বেলজিয়ান পত্রিকা লা সোয়াঁ (La Soir)-তে স্পষ্টভাবেই বলেছেন, “আমি মৃত্যুকে ভয় পাই না এটা বললে বাড়িয়ে বলা হবে। কিন্তু তার পর কী আসবে তা নিয়ে আমি ভীত নই, কারণ আমি বিশ্বাসী নই।”[৭০][৭১]
তিনি জোরালোভাবেই জীববৈজ্ঞানিক বিবর্তন সত্য বলে সমর্থন করতেন, এবং সৃষ্টি বিজ্ঞান এবং বুদ্ধিমান নকশা অগ্রাহ্য করতেন, যা তার সর্বশেষ গ্রন্থ, Genetics of Original Sin: The Impact of Natural Selection on the Future of Humanity (অনূদিত শিরোনাম: আদি পাপের বংশগতি: মানবতার ভবিষ্যতের ওপর প্রাকৃতিক নির্বাচনের প্রভাব) -এ পরিষ্কারভাবেই উল্লেখ করেছেন। তিনি ২০০৮ সালে লুইসিয়ানা বিজ্ঞান শিক্ষা আইন বাতিল করার প্রচেষ্টার পৃষ্ঠপোষকতা করা আটাত্তর জন নোবেল বিজেতার একজন ছিলেন।[৭১]
পরিণয়
[সম্পাদনা]দে দুভ ১৯৪৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর জেনিন হারম্যানের সাথে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন। তাদের দুই পুত্র, অঁরি ও অ্যালেন, এবং দুই কন্যা, অ্যান ও ফ্রাসোয়াঁ রয়েছে। জেনিন ২০০৮ সালে, ৮৬ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।[১৭]
মৃত্যু
[সম্পাদনা]দে দুভ ৪ মে, ২০১৩ সালে, তার নিজ বাসভবন নেথেন, বেলজিয়ামে ৯৫ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি আইনিভাবে ইউথানেসিয়ার মাধ্যমে নিজের মৃত্যুর সিদ্ধান্ত নেন, যা দুই জন চিকিৎসক এবং তার চার সন্তানের উপস্থিতিতে সম্পন্ন হয়। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই ক্যান্সার ও অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন (atrial fibrillation) -এ ভুগছিলেন, এবং মৃত্যুর কিছুদিন আগেই নিজ গৃহে পড়ে যাওয়ার কারণে তার স্বাস্থ্য-সমস্যার অবনতি ঘটে নিজ গৃহে পড়ে। তিনি দুই পুত্র ও দুই কন্যা; দুই ভাই, পিয়ের ও ড্যানিয়েল; সাতজন নাতি-নাতনি; এবং দুই প্রপৌত্র রেখে গেছেন।[৭২][৭৩][৭৪]
তার ইচ্ছানুসারে দে দুভের শবদেহ দাহ করা হয়, এবং তার দেহভস্ম পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়া হয়।[৩]
পুরস্কার ও সম্মাননা
[সম্পাদনা]দে দুভ ১৯৬০ সালে জীব ও চিকিৎসাবিজ্ঞানের জন্য প্রদত্ত ফ্রাঁকি পুরস্কার পান,[৭৫] এবং ১৯৭৪ সালে শারীরতত্ত্ব বা চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন। বেলজিয়ামের রাজা বুদোয়াঁ কর্তৃক ১৯৮৯ সালে তিনি ভাইকাউন্ট এর সম্মানে ভূষিত হন।[১৭] তিনি ১৯৬৭ সালে গার্ডনার ফাউন্ডেশন আন্তর্জাতিক পুরস্কার,[৭৬] এবং ১৯৭৩ সালে রয়্যাল নেদারল্যান্ড শিল্পকলা ও বিজ্ঞান পরিষদ কর্তৃক ড. এইচপি হাইনেকেন জৈবরসায়ন ও জৈবপদার্থবিদ্যা পুরস্কার লাভ করেন।[৭৭]
তিনি ১৯৭৫ সালে জাতীয় বিজ্ঞান পরিষদ (যুক্তরাষ্ট্র) এর বিদেশি সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন।[৭৮] তিনি গ্রেট ব্রিটেনের জৈবরাসায়নিক সমিতি কর্তৃক ১৯৭৮ সালে হার্ডেন পদকে; আলবানি মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃক ১৯৮১ সালে থিওবল্ড স্মিথ পুরস্কারে; ১৯৮৫ সালে হিমেনেজ দিয়াজ পুরস্কার; ১৯৮৬ তে মেডিক্যাল কলেজ অফ ভার্জিনিয়া কর্তৃক জৈবরসায়নের উদ্ভাবক পুরস্কার (Innovators of Biochemistry); ১৯৮৯ সালে ই.বি. উইলসন পদকে ভূষিত হন।[৭৯][৮০]
তিনি রাজকীয় চিকিৎসা পরিষদ, বেলজিয়ামের রাজকীয় রয়্যাল বিজ্ঞান, কলা ও সাহিত্য পরিষদ; ভ্যাটিকানের পন্টিফিকাল বিজ্ঞান পরিষদ; আমেরিকান বিজ্ঞান পরিষদ; ফরাসি জাতীয় চিকিৎসা পরিষদ; প্যারিস বিজ্ঞান পরিষদ; (Deutsche Akademie der Naturforscher Leopoldina); এবং আমেরিকান দার্শনিক সমাজ- এর সদস্য ছিলেন। তিনি ১৯৮৮ সালে রাজকীয় পরিষদের বিদেশি সদস্য (ForMemRS) হিসেবে নির্বাচিত হন।[৮১] এছাড়াও, তিনি সারা বিশ্বের ১৮টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট উপাধিতে ভূষিত হন।[১৮]
উত্তরাধিকার
[সম্পাদনা]১৯৭৪ সালে দে দুভ লুভাঁ ক্যাথোলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বহুশাস্ত্রীয় জৈবচিকিৎসা গবেষণা ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠা করেন, যার আদি নাম ছিল আন্তর্জাতিক কোষীয় ও আণবিক রোগবিজ্ঞান ইন্সটিটিউট (আইসিপি)।[৮২]
তিনি ১৯৯১ সাল পর্যন্ত এর প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তার আশিতম জন্মদিনে, ১৯৯৭ সালে এর পুনঃনামকরণ করা হয় ক্রিশ্চিয়ান দে দুভ কোষীয় রোগবিজ্ঞান ইন্সটিটিউট হিসেবে। ২০০৫ সালে এর নাম আরও সংক্ষিপ্ত করে দে দুভ ইন্সটিটিউট রাখা হয়।[৮৩]
দে দুভ ছিলেন বেলজিয়ান জৈবরসায়ন ও আণবিক জীববিজ্ঞান সমিতি’র অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন, যা ১৫ সেপ্টেম্বর ১৯৫১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।[৮৪]
গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক পরিভাষার উদ্ভাবক হিসেবে দে দুভ স্মরণীয় হয়ে আছেন। ১৯৫৫ সালে তিনি লাইসোসোম শব্দটির প্রচলন করেন, ১৯৬৬ সালে পারঅক্সিসোম, এবং ১২-১৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৩ সালে লন্ডনে সিবা ফাউন্ডেশন আয়োজিত লাইসোসোম শীর্ষক আলোচনা-সভা তে একই সাথে autophagy, endocytosis, এবং exocytosis শব্দগুলোর প্রবর্তন করেন, যখন তিনি “শব্দ-উদ্ভাবনের মেজাজে ছিলেন”।[২১][৮৫]
দে দুভের জীবন, যার মধ্যে তার নোবেল পুরস্কার জয়ী গবেষণা-কর্মও অন্তর্ভুক্ত, এবং জীববিজ্ঞানের প্রতি তার অগাধ অনুরাগ নিয়ে, অরেলি ওয়াইন্যান্টস (Aurélie Wijnants) এর পরিচালনায় তৈরি হয়েছে প্রামাণ্যচিত্র নোবেল পুরস্কারের প্রতিকৃতি : ক্রিশ্চিয়ান দে দুভ (Portrait de Nobel : Christian de Duve)। এটি ২০১২ সালে ইউরোচ্যানেলে প্রথম প্রচারিত হয়।[৮৬]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "Fellowship of the Royal Society 1660-2015"। London: Royal Society। ১৫ জুলাই ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ ক খ Blobel, Günter (জুন ২০১৩)। "Christian de Duve (1917–2013)"। Nature (ইংরেজি ভাষায়)। ৪৯৮ (৭৪৫৪): ৩০০। আইএসএসএন 0028-0836। ডিওআই:10.1038/498300a।
- ↑ ক খ "Dr Christian Renè Marie Joseph de Duve"। www.findagrave.com। ২৭ নভেম্বর ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ১৫ আগস্ট ২০১৯।
- ↑ "The Nobel Prize in Physiology or Medicine 1974"। www.nobelprize.org। সংগ্রহের তারিখ ১৫ আগস্ট ২০১৯।
- ↑ "Christian de Duve Biographical"। www.nobelprize.org। সংগ্রহের তারিখ ১৫ আগস্ট ২০১৯।
- ↑ "A rather ordinary person"। www.webofstories.com। সংগ্রহের তারিখ ১৫ আগস্ট ২০১৯।
- ↑ Kroto, Harry (২০০৫)। "Christian de Duve - Science Video Interview"। www.vega.org.uk। সংগ্রহের তারিখ ১৫ আগস্ট ২০১৯।
- ↑ "Cristian de Duve"। www.telegraph.co.uk। ১ জুলাই ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ১৫ আগস্ট ২০১৯।
- ↑ Exton, John (সেপ্টেম্বর ২০১৩)। "Retrospective : Cristian de Duve, 1917 - 2013"। American Society for Biochemistry and Molecular Biology। ১৫ মে ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ আগস্ট ২০১৯।
- ↑ Gellene, Denise (৬ মে ২০১৩)। "Christian de Duve, 95, Dies; Nobel-Winning Biochemist"। New York Times। সংগ্রহের তারিখ ১৫ আগস্ট ২০১৯।
- ↑ ক খ গ de Duve, Christian (২০০৪-০৫-২১)। "My Love Affair with Insulin"। Journal of Biological Chemistry (ইংরেজি ভাষায়)। 279 (21): 21679–21688। আইএসএসএন 0021-9258। ডিওআই:10.1074/jbc.X400002200।
- ↑ Tricot, Jean-Pierre (এপ্রিল ২০০৬)। "Nobel prize winner Christian de Duve. From insulin to lysosomes"। Hormones (Athens, Greece)। ৫ (২): ১৫১–১৫৫। আইএসএসএন 1109-3099। পিএমআইডি 16807228। সংগ্রহের তারিখ ১৫ আগস্ট ২০১৯।
- ↑ ""The Director-General Pays Tribute to the Memory of Professor Christian de Duve""। UNESCO। ১৭ মে ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ১৫ আগস্ট ২০১৯।
- ↑ "Christian René de Duve | Belgian biochemist"। Encyclopedia Britannica (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-১৪।
- ↑ ক খ গ ঘ Sabatini, D. D.; Adesnik, M. (২০১৩-০৮-১৩)। "Christian de Duve: Explorer of the cell who discovered new organelles by using a centrifuge"। Proceedings of the National Academy of Sciences (ইংরেজি ভাষায়)। ১১০ (৩৩): 13234–13235। আইএসএসএন 0027-8424। ডিওআই:10.1073/pnas.1312084110। পিএমআইডি 23924611। পিএমসি 3746853 ।
- ↑ Cullen, Katherine E. (২০০৯)। Encyclopedia of life science। New York: Facts On File। আইএসবিএন 9781438127057। ওসিএলসি 432079969।
- ↑ ক খ গ "Christian de Duve: Authority on cell mechanisms"। The Independent (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৩-০৫-১৪। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-১৪।
- ↑ ক খ Opperdoes, Fred (২০১৩-১০-০১)। "A Feeling for the Cell: Christian de Duve (1917–2013)"। PLoS Biology (ইংরেজি ভাষায়)। 11 (10): e1001671। আইএসএসএন 1545-7885। ডিওআই:10.1371/journal.pbio.1001671। পিএমসি 3794854 ।
- ↑ Exton, John H. (John Howard), 1933- (২০১৩)। Crucible of science : the story of the Cori laboratory। New York: Oxford University Press। আইএসবিএন 9780199861088। ওসিএলসি 843881801।
- ↑ Turk, Vito (জানুয়ারি ২০১২)। "Special issue: Proteolysis 50 years after the discovery of lysosome in honor of Christian de Duve"। Biochimica et Biophysica Acta (BBA) - Proteins and Proteomics (ইংরেজি ভাষায়)। ১৮২৪ (১): ১–২। ডিওআই:10.1016/j.bbapap.2011.11.001। সংগ্রহের তারিখ ৩১ আগস্ট ২০১৯।
- ↑ ক খ গ ঘ Klionsky, Daniel J. (২০০৮-০৮-১৬)। "Autophagy revisited: A conversation with Christian de Duve"। Autophagy (ইংরেজি ভাষায়)। 4 (6): 740–743। আইএসএসএন 1554-8627। ডিওআই:10.4161/auto.6398।
- ↑ Berthet, J. (২০০৭)। "[Scientific work of Christian de Duve]"। Bulletin Et Memoires De l'Academie Royale De Medecine De Belgique। 162 (10-12): 499–504। আইএসএসএন 0377-8231। পিএমআইডি 18557391।
- ↑ Courtoy, Pierre (সেপ্টেম্বর ২০০৭)। "A tribute to Professor Christian de Duve on his 90th birthday"। Journal of Cellular and Molecular Medicine। ১১ (৫): ৯০২–৯০৫। আইএসএসএন 1582-1838। ডিওআই:10.1111/j.1582-4934.2007.00118.x। পিএমআইডি 17979871। পিএমসি 4401261 ।
- ↑ Zetterström, Rolf (ডিসেম্বর ২০১২)। "A. Claude (1899-1983), C. de Duve (1917-) and G. E. Palade (1912-): Nobel Prize for discoveries in integrated cell physiology. Clarification of aetiology and pathogenesis of a great number of diseases"। Acta Paediatrica (Oslo, Norway: 1992)। 95 (12): 1523–1525। আইএসএসএন 0803-5253। ডিওআই:10.1080/08035250601089116। পিএমআইডি 17129956।
- ↑ Tricot, Jean-Pierre (২০০৬-০৪-১৫)। "Nobel prize winner Christian de Duve. From insulin to lysosomes"। HORMONES। 5 (2): 151–155। ডিওআই:10.14310/horm.2002.11179।
- ↑ Raju, Tonse NK (অক্টোবর ১৯৯৯)। "The Nobel Chronicles"। The Lancet (ইংরেজি ভাষায়)। 354 (9185): 1219। ডিওআই:10.1016/S0140-6736(05)75433-7।
- ↑ Bowers, William E. (১৯৯৮-০৮-০১)। "Christian de Duve and the discovery of lysosomes and peroxisomes"। Trends in Cell Biology (English ভাষায়)। 8 (8): 330–333। আইএসএসএন 0962-8924। ডিওআই:10.1016/S0962-8924(98)01314-2। পিএমআইডি 9704410।
- ↑ Berthet, J. (১৯৯৪)। "[Introduction of Professor Christian De Duve, Nobel Prize in Medicine and Physiology in 1974]"। Bulletin Et Memoires De l'Academie Royale De Medecine De Belgique। 149 (12): 476–480। আইএসএসএন 0377-8231। পিএমআইডি 8563687।
- ↑ Takano, T. (জানুয়ারি ১৯৭৫)। "[Profile of Dr. C. de Duve, the 1974 Nobel prize winner in medical physiology]"। Tanpakushitsu Kakusan Koso. Protein, Nucleic Acid, Enzyme। 20 (1): 77–78। আইএসএসএন 0039-9450। পিএমআইডি 1094499।
- ↑ James, J. (১৯৭৪-১২-২৮)। "[The Nobel Prize in Medicine for Claude, Palade and De Duve]"। Nederlands Tijdschrift Voor Geneeskunde। 118 (52): 1949–1951। আইএসএসএন 0028-2162। পিএমআইডি 4612387।
- ↑ Olsen, B. R.; Lie, S. O. (১৯৭৪-১২-১০)। "[Nobel prize in medicine 1974 (Albert Claude, George Palade, Christian de Duve)]"। Tidsskrift for Den Norske Laegeforening: Tidsskrift for Praktisk Medicin, Ny Raekke। 94 (34-36): 2400–2403। আইএসএসএন 0029-2001। পিএমআইডি 4614493।
- ↑ Florkin, Marcel (জানুয়ারি ১৯৭৪)। "Hommage à. Albert Claude Et à Christian De Duve, Lauréats Du Prix Nobel De Médecine Et De Physiologie, 1974"। Archives Internationales de Physiologie et de Biochimie (ইংরেজি ভাষায়)। 82 (5): 807–815। আইএসএসএন 0003-9799। ডিওআই:10.3109/13813457409072328।
- ↑ De Duve, C.; Hooft, C. (১৯৬৮)। "[Quinquennial prizes of the medical sciences, period 1961-1965. Address by Prof. Chr. De Duve]"। Verhandelingen - Koninklijke Vlaamse Academie Voor Geneeskunde Van Belgie। 30 (7): 381–388। আইএসএসএন 0300-9017। পিএমআইডি 5712764।
- ↑ Murlin, John R.; Kimball, C. P. (১৯২৩-১১-০১)। "Aqueous Extracts of Pancreas Iii. Some Precipitation Reactions of Insulin"। Journal of Biological Chemistry (ইংরেজি ভাষায়)। 58 (1): 337–346। আইএসএসএন 0021-9258।
- ↑ Bouckaert, J. P.; de DUVE, C. (জানুয়ারি ১৯৪৭)। "The action of insulin"। Physiological Reviews। 27 (1): 39–71। আইএসএসএন 0031-9333। ডিওআই:10.1152/physrev.1947.27.1.39। পিএমআইডি 20282153।
- ↑ De Duve, C. (১৯৫১)। "Glucagon, the hyperglycemic factor of the pancreas"। Acta Physiologica Et Pharmacologica Neerlandica। 2 (2): 311–314। আইএসএসএন 0001-6748। পিএমআইডি 14902502।
- ↑ De Duve, C.; Vuylsteke, C. A. (১৯৫৩)। "[New research on glucagon]"। Journal De Physiologie। 45 (1): 107–108। আইএসএসএন 0021-7948। পিএমআইডি 13062154।
- ↑ De Duve, C.; Vuylsteke, C. A. (ফেব্রুয়ারি ১৯৫৩)। "[Purification of glucagon (hyperglycemic-glycogenolytic factor of the pancreas)]"। Archives Internationales De Physiologie। 61 (1): 107–108। আইএসএসএন 0301-4541। পিএমআইডি 13058530।
- ↑ Vuylsteke, C. A.; De Duve, C. (এপ্রিল ১৯৫৩)। "[Glucagon content of avian pancreas]"। Archives Internationales De Physiologie। 61 (2): 273–274। আইএসএসএন 0301-4541। পিএমআইডি 13081242।
- ↑ Tricot, Jean-Pierre (এপ্রিল ২০০৬)। "Nobel prize winner Christian de Duve. From insulin to lysosomes"। Hormones (Athens, Greece)। 5 (2): 151–155। আইএসএসএন 1109-3099। পিএমআইডি 16807228।
- ↑ Neufeld, Elizabeth F. (ডিসেম্বর ২০১৩)। "Unexpected observations--a tribute to Christian de Duve (1917-2013)"। FASEB journal: official publication of the Federation of American Societies for Experimental Biology। 27 (12): 4661–4663। আইএসএসএন 1530-6860। ডিওআই:10.1096/fj.13-1201ufm। পিএমআইডি 24298016।
- ↑ Lefèbvre, P. J. (অক্টোবর ২০১১)। "Early milestones in glucagon research"। Diabetes, Obesity & Metabolism। 13 Suppl 1: 1–4। আইএসএসএন 1463-1326। ডিওআই:10.1111/j.1463-1326.2011.01437.x। পিএমআইডি 21824250।
- ↑ Vuylsteke, C. A.; De Duve, C. (এপ্রিল ১৯৫৩)। "[Influence of glucagon on the action of insulin]"। Archives Internationales De Physiologie। 61 (2): 275–276। আইএসএসএন 0301-4541। পিএমআইডি 13081243।
- ↑ De Duve, C. (১৯৫৩-০৭-১৮)। "Glucagon; the hyperglycaemic glycogenolytic factor of the pancreas"। Lancet (London, England)। 265 (6777): 99–104। আইএসএসএন 0140-6736। ডিওআই:10.1016/s0140-6736(53)90052-x। পিএমআইডি 13070549।
- ↑ Berthet, J.; De Duve, C. (ডিসেম্বর ১৯৫১)। "Tissue fractionation studies. I. The existence of a mitochondria-linked, enzymically inactive form of acid phosphatase in rat-liver tissue"। The Biochemical Journal। 50 (2): 174–181। আইএসএসএন 0264-6021। ডিওআই:10.1042/bj0500174। পিএমআইডি 14904389। পিএমসি 1197627 ।
- ↑ Berthet, J.; Berthet, L.; Appelmans, F.; De Duve, C. (ডিসেম্বর ১৯৫১)। "Tissue fractionation studies. II. The nature of the linkage between acid phosphatase and mitochondria in rat-liver tissue"। The Biochemical Journal। 50 (2): 182–189। আইএসএসএন 0264-6021। ডিওআই:10.1042/bj0500182। পিএমআইডি 14904390। পিএমসি 1197628 ।
- ↑ Beaufay, H.; De Duve, C. (১৯৫৪)। "[The hexosephosphatase system. VI. Attempted fractionation of microsomes containing glucose-6-phosphatase]"। Bulletin De La Societe De Chimie Biologique। 36 (11-12): 1551–1568। আইএসএসএন 0037-9042। পিএমআইডি 14378854।
- ↑ Appelmans, F.; Wattiaux, R.; De Duve, C. (মার্চ ১৯৫৫)। "Tissue fractionation studies. 5. The association of acid phosphatase with a special class of cytoplasmic granules in rat liver"। The Biochemical Journal। 59 (3): 438–445। আইএসএসএন 0264-6021। ডিওআই:10.1042/bj0590438। পিএমআইডি 14363114। পিএমসি 1216263 ।
- ↑ Castro-Obregon, Susana (২০১০)। "The Discovery of Lysosomes and Autophagy"। www.nature.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-৩১।
- ↑ de Duve, Christian (সেপ্টেম্বর ২০০৫)। "The lysosome turns fifty"। Nature Cell Biology। 7 (9): 847–849। আইএসএসএন 1465-7392। ডিওআই:10.1038/ncb0905-847। পিএমআইডি 16136179।
- ↑ Novikoff, A. B.; Beaufay, H.; De Duve, C. (১৯৫৬-০৭-২৫)। "Electron microscopy of lysosomerich fractions from rat liver"। The Journal of Biophysical and Biochemical Cytology। 2 (4 Suppl): 179–184। আইএসএসএন 0095-9901। পিএমআইডি 13357540। পিএমসি 2229688 ।
- ↑ De Duve, C.; Beaufay, H.; Jacques, P.; Rahman-Li, Y.; Sellinger, O. Z.; Wattiaux, R.; De Coninck, S. (১৯৬০-০৫-০৬)। "Intracellular localization of catalase and of some oxidases in rat liver"। Biochimica Et Biophysica Acta। 40: 186–187। আইএসএসএন 0006-3002। ডিওআই:10.1016/0006-3002(60)91338-x। পিএমআইডি 13814739।
- ↑ Bernhard, W.; Rouiller, C. (১৯৫৬-০৭-২৫)। "Microbodies and the problem of mitochondrial regeneration in liver cells"। The Journal of Biophysical and Biochemical Cytology। 2 (4 Suppl): 355–360। আইএসএসএন 0095-9901। ডিওআই:10.1083/jcb.2.4.355। পিএমআইডি 13357568। পিএমসি 2229729 ।
- ↑ De Duve, C.; Wattiaux, R.; Baudhuin, P. (১৯৬২)। "Distribution of enzymes between subcellular fractions in animal tissues"। Advances in Enzymology and Related Subjects of Biochemistry। 24: 291–358। আইএসএসএন 0065-258X। পিএমআইডি 13884182।
- ↑ Baudhuin, P.; Beaufay, H.; De Duve, C. (১৯৬৫)। "Combined biochemical and morphological study of particulate fractions from rat liver. Analysis of preparations enriched in lysosomes or in particles containing urate oxidase, D-amino acid oxidase, and catalase"। The Journal of Cell Biology। 26 (1): 219–243। আইএসএসএন 0021-9525। ডিওআই:10.1083/jcb.26.1.219। পিএমআইডি 4379260। পিএমসি 2106697 ।
- ↑ Bonetta, Laura (২০০৫-০৬-০৬)। "Seeing peroxisomes"। The Journal of Cell Biology। 169 (5): 705। আইএসএসএন 0021-9525। ডিওআই:10.1083/jcb1695fta2। পিএমসি 2254818 ।
- ↑ De Duve, C.; Baudhuin, P. (১৯৬৬)। "Peroxisomes (microbodies and related particles)"। Physiological Reviews। 46 (2): 323–357। আইএসএসএন 0031-9333। ডিওআই:10.1152/physrev.1966.46.2.323। পিএমআইডি 5325972।
- ↑ Leighton, F.; Poole, B.; Beaufay, H.; Baudhuin, P.; Coffey, J. W.; Fowler, S.; De Duve, C. (১৯৬৮)। "The large-scale separation of peroxisomes, mitochondria, and lysosomes from the livers of rats injected with triton WR-1339. Improved isolation procedures, automated analysis, biochemical and morphological properties of fractions"। The Journal of Cell Biology। 37 (2): 482–513। আইএসএসএন 0021-9525। ডিওআই:10.1083/jcb.37.2.482। পিএমআইডি 4297786। পিএমসি 2107417 ।
- ↑ de Duve, C. (১৯৬৯-০৪-১৫)। "The peroxisome: a new cytoplasmic organelle"। Proceedings of the Royal Society of London. Series B, Biological Sciences। 173 (1030): 71–83। আইএসএসএন 0950-1193। পিএমআইডি 4389648।
- ↑ de Duve, C. (১৯৮২)। "Peroxisomes and related particles in historical perspective"। Annals of the New York Academy of Sciences। 386: 1–4। আইএসএসএন 0077-8923। ডিওআই:10.1111/j.1749-6632.1982.tb21402.x। পিএমআইডি 6953840।
- ↑ de Duve, C. (১৯৯৬-১২-২৭)। "The peroxisome in retrospect"। Annals of the New York Academy of Sciences। 804: 1–10। আইএসএসএন 0077-8923। ডিওআই:10.1111/j.1749-6632.1996.tb18603.x। পিএমআইডি 8993531।
- ↑ de Duve, Christian (২০০৭)। "The origin of eukaryotes: a reappraisal"। Nature Reviews. Genetics। 8 (5): 395–403। আইএসএসএন 1471-0056। ডিওআই:10.1038/nrg2071। পিএমআইডি 17429433।
- ↑ De Duve, C. (১৯৬৯-১২-১৯)। "Evolution of the peroxisome"। Annals of the New York Academy of Sciences। 168 (2): 369–381। আইএসএসএন 0077-8923। ডিওআই:10.1111/j.1749-6632.1969.tb43124.x। পিএমআইডি 5270945।
- ↑ de Duve, C. (১৯৯৬)। "The birth of complex cells"। Scientific American। 274 (4): 50–57। আইএসএসএন 0036-8733। ডিওআই:10.1038/scientificamerican0496-50। পিএমআইডি 8907651।
- ↑ De Duve, C. (১৯৯৮)। "Constraints on the origin and evolution of life"। Proceedings of the American Philosophical Society। 142 (4): 525–532। আইএসএসএন 0003-049X। পিএমআইডি 11623597।
- ↑ de Duve, C. (১৯৯৮)। "[Reflections on the origin and evolution of life]"। Comptes Rendus Des Seances De La Societe De Biologie Et De Ses Filiales। 192 (5): 893–901। আইএসএসএন 0037-9026। পিএমআইডি 9871802।
- ↑ "Introductory essay - ISSR Library"। www.issrlibrary.org। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-৩১।
- ↑ Farrell, John। "A Nobel Laureate And Proponent Of Original Sin"। Forbes (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-৩১।
- ↑ "John Templeton Foundation : Does the Universe Have a Purpose?"। web.archive.org। ২০১৩-১১-৩০। Archived from the original on ২০১৩-১১-৩০। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-৩১।
- ↑ "Nobel-winning cancer researcher ends his own life"। ABC News (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৩-০৫-০৭। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-৩১।
- ↑ ক খ "Christian de Duve: Authority on cell mechanisms"। The Independent (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৩-০৫-১৪। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-৩১।
- ↑ Kmietowicz, Z. (২০১৩-০১-১৮)। "Trial participants call for drug regulator to ensure study results are published"। BMJ (ইংরেজি ভাষায়)। 346 (jan18 1): f382–f382। আইএসএসএন 1756-1833। ডিওআই:10.1136/bmj.f382।
- ↑ Gellene, Denise (২০১৩-০৫-০৬)। "Christian de Duve, 95, Dies; Nobel-Winning Biochemist"। The New York Times (ইংরেজি ভাষায়)। আইএসএসএন 0362-4331। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-৩১।
- ↑ "Dr. Christian de Duve dies at 95; Nobel-winning scientist"। Los Angeles Times (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৩-০৫-০৭। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-৩১।
- ↑ "Lauréats – Fondation Francqui – Stichting"। www.francquifoundation.be। ২০১৭-০৪-০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-৩১।
- ↑ "All Gairdner Awards Laureates"। Gairdner Foundation (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-৩১।
- ↑ "Dr H.P. Heineken Prize for Biochemistry and Biophysics — KNAW"। knaw.nl। ২০১৯-০৫-০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-৩১।
- ↑ "Christian de Duve"। www.nasonline.org। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-৩১।
- ↑ "Nobel laureate Christian de Duve dies at 95"। News (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-৩১।
- ↑ "E.B. Wilson Medal"। ASCB (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-৩১।
- ↑ "WebCite query result"। www.webcitation.org। ২০১৫-১০-১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-৩১।
- ↑ "About us - History"। web.archive.org। ২০১৩-১১-০১। Archived from the original on ২০১৩-১১-০১। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-৩১।
- ↑ "The Rockefeller University » Hospital Centennial"। centennial.rucares.org। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-৩১।
- ↑ "Belgian Society of Biochemistry and Molecular Biology"। www.icp.ucl.ac.be। ২০১৫-০১-০২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-৩১।
- ↑ de Duve, C. (১৯৮৩-১২-১৫)। "Lysosomes revisited"। European Journal of Biochemistry। 137 (3): 391–397। আইএসএসএন 0014-2956। ডিওআই:10.1111/j.1432-1033.1983.tb07841.x। পিএমআইডি 6319122।
- ↑ Eurochannel। "Portrait of a Nobel Prize: Christian de Duve - Aurélie Wijnants - France | Euro Cinema | English - Eurochannel"। Eurochannel: The European TV channel - European movies, TV series and music (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-৩১।