বিষয়বস্তুতে চলুন

বলরাম

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বলরাম
দশাবতারের সপ্তম অবতার/শেষ নাগের অবতার [] [] গোষ্ঠীর সদস্য
বলরাম, শ্রীকৃষ্ণের বড় ভাই।
অন্তর্ভুক্তিশেষনাগ বা বিষ্ণুর অবতার
আবাসবৈকুণ্ঠ, পাতাল, বৃন্দাবন
অস্ত্রহল বা লাঙল, গদা
উৎসববলরাম জয়ন্তী, রথযাত্রা
ব্যক্তিগত তথ্য
জন্ম
গোকুল, উত্তর প্রদেশ, ভারত
মাতাপিতা
নন্দ পালক পিতা, যশোদা পালক মাতা।
সহোদরকৃষ্ণ এবং সুভদ্রা (বোন)
সঙ্গীরেবতী
সন্তাননিশাথ এবং উল্মুক (পুত্র),[] বৎসলা (কন্যা)
রাজবংশযাদব বংশীয়

বলরাম (সংস্কৃত: बलराम) হলেন একজন হিন্দু দেবতা এবং শ্রীকৃষ্ণের জ্যেষ্ঠভ্রাতা। তিনি বলদেব, বলভদ্রহলায়ুধ নামেও পরিচিত। তিনি জগন্নাথ ঐতিহ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, ত্রয়ী দেবতাদের একজন। [] বৈষ্ণবরা বলরামকে বিষ্ণুর অবতার জ্ঞানে পূজা করেন। ভাগবত পুরাণের অবতারপট তালিকাতেও তার নাম আছে। বৈষ্ণব ও অন্যান্য হিন্দুরা সবাই তাকে বিষ্ণুর শয্যারূপী শেষনাগের একটি রূপ বলে মনে করেন। দ্বাপর যুগের শেষে বলরামের জন্ম হয় রোহিণীর গর্ভে। রোহিণী হলেন শ্রীকৃষ্ণের পিতা বসুদেবের আর এক পত্নী ও নন্দের ভগিনী। শ্রীহরি বিষ্ণুর আদিশেষ নাগের অবতার হলেন বলরাম। অত্যাচারী কংসের কারাগারে বন্দী বসুদেব ও দেবকীর সপ্তম গর্ভে বলরাম আসেন, কিন্তু কংসের হাত থেকে সেই শিশুকে বাঁচানোর জন্য শ্রীহরির আদেশে দেবী যোগমায়া দেবকীর সপ্তম গর্ভের ভ্রূণ সেখান থেকে গোকুলে নন্দগৃহে রোহিণীর গর্ভে স্থাপিত করেন। এবং রোহিণীর গর্ভে বলরামের জন্ম হয়। যাদব বংশীয় গুরু গর্গাচার্য রোহিনী পুত্রের নাম দেন বলরাম। বল মানে শক্তি। শক্তি ও আধ্যাত্মিকতার মিলন হয়েছে বলে তার নাম বলরাম রাখা হয়। এছাড়াও দেবকী গর্ভ থেকে সংকর্ষণ করা হয়েছে বলে তার আরেক নাম সংকর্ষণ । এছাড়াও তাকে হলধর বলা হয় । তিনি ছোটভাই শ্রীকৃষ্ণের সহিত অনেক অসুর বধ করেন ও ভাইয়ের সাথে এক মধুর সম্পর্কের আদর্শ স্থাপন করেছেন।

সত্যযুগে মহারাজা রেবতের পুত্র মহারাজা কাকুদমি যজ্ঞ করে এক গুণবতী সুলক্ষণা কন্যা সন্তান লাভ করেন । সেই কন্যার বিবাহ কার সাথে দিবেন তা মনস্থির না করতে পেরে তিনি ব্রহ্মার নিকট যান । ব্রহ্মা জানান যে ,দ্বাপরে ভগবান বিষ্ণুর সাথে শেষনাগ বলরাম অবতার ধারন করেছেন এবং তিনিই কাকুদমি কন্যা রেবতীর উপযুক্ত । রাজা জানতে পারেন যে পৃথিবীর সময় ব্রহ্মলোকের থেকে দ্রুত গতিসম্পন্ন । তাই এখন সত্যযুগ এবং ক্রেতাযুগ সমাপ্ত হয়ে দ্বাপর যুগের সূচনা হয়েছে । রাজা ব্রহ্মার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে দ্বারকায় উপস্থিত হন এবং বলরামের সহিত রেবতীর বিবাহ দেন।

মূর্তির বিবরণ

[সম্পাদনা]

পুরাণ মতে বলরাম নীলবস্ত্র পরিহিত, কনক ভূষণ, তার অস্ত্র লাঙল বা হল। তাই তাঁকে "হলধর" ও বলা হয়। কোনো কোনো মূর্তিতে তাঁর হাতে গদা দেখা যায়।তাঁকে কখনো বিষ্ণুর অবতার আবার কখনো শেষনাগের অবতার বলা হয়।

বিবরণ

[সম্পাদনা]

কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে বলরাম কোনো পক্ষ অবলম্বন করেননি। একজন আদর্শ ভ্রাতা হিসেবে বলরাম তুলনাহীন। বাল্যকাল থেকে কৃষ্ণ তাঁকে কম জ্বালাননি। তবু সবকিছু হাসিমুখে সহ্য করেছেন। বহু বিপদে শ্রীকৃষ্ণকে আগলে রেখেছেন। বলরাম অত্যন্ত পত্নীনিষ্ঠ। স্ত্রী রেবতী তার চাইতে ঢের বড়, একেবারে সত্য যুগের নারী। তার প্রতি বলরামের প্রেম এতটাই দৃঢ় যে, তিনি দ্বিতীয় বিবাহের কথা ভাবেনইনি। তার দুই পুত্র নিশথ ও উল্মুক এবং এক কন্যা বৎসলা। বলরাম পূর্বজন্মে ছিলেন রামের ভ্রাতা লক্ষ্মণ। তিনি ভগবান নারায়ণের কাছে অনুরোধ করেন তাকে যেন তার জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা হিসেবে একজন্ম কাটাতে দেওয়া হয়। তাই তিনি দ্বাপরে কৃষ্ণের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা হয়ে জন্ম নেন। বলরামের অস্ত্র এক বিশাল লাঙল। তিনি এ কারণে ‘হলধারী’ নামেও পরিচিত। তিনি সর্বদা নীলাম্বরধারী। তিনি তুমুল পানাসক্ত ছিলেন। এই আসক্তি নিয়ে অনেকবার অনেক রকম সমস্যাও হয়। তিনি ভীম এবং দুর্যোধনের গুরু। তারা তার কাছে গদাযুদ্ধ শিখেন।[]

ইতিহাসে বলরাম

[সম্পাদনা]
মধ্যযুগের ৮ম-১৩দশ শতাব্দীতে নির্মিত মথুরায় প্রাপ্ত বলরাম এর মূর্তি

বলরাম হলেন একজন প্রাচীন দেবতা, ভারতীয় ইতিহাসের মহাকাব্য যুগে প্রত্নতাত্ত্বিক এবং মুদ্রাসংক্রান্ত প্রমাণ দ্বারা তার প্রাচীনত্ব প্রমাণিত হয়। তার প্রাপ্ত প্রাচীন মূর্তিগুলোতে নাগ (অনেক মাথাওয়ালা সর্প), একটি লাঙ্গল এবং জল দেওয়ার পাত্র রয়েছে যা প্রাচীন কৃষিভিত্তিক সমাজে তিনি পূজিত হতেন তা নির্দেশ করে। মহাভারতের বিভিন্ন পর্বে তার সম্পর্কে কাহিনী রয়েছে। মহাভারতের বন পর্বে উল্লেখিত হয়েছে- বলরাম হলেন বিষ্ণুর অবতার এবং অন্যদিকে, কৃষ্ণ হলেন সমস্ত অবতার এবং অস্তিত্বের উৎস। বিজয়নগর সাম্রাজ্যের কিছু শিল্পকর্মে, গুজরাটের মন্দির এবং অন্যত্র প্রাপ্ত প্রত্নবস্তু বলা হয়েছে- বলদেব হলেন বিষ্ণুর অষ্টম অবতার, যিনি বুদ্ধের (বৌদ্ধধর্ম) এবং অরিহন্তের (জৈনধর্ম) পূর্ববর্তী।

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]
  1. Coulter, Charles Russell; Turner, Patricia (৪ জুলাই ২০১৩)। Encyclopedia of Ancient Deitiesআইএসবিএন 9781135963903 
  2. Nehra, Air Marshal R. K.। Hinduism & Its Military Ethosআইএসবিএন 9781935501473 
  3. "The Vishnu Purana: Book V: Chapter XXV" 
  4. James G. Lochtefeld (2002). The Illustrated Encyclopedia of Hinduism: A-M. The Rosen Publishing Group. pp. 82–84, 269. ISBN 978-0-8239-3179-8.
  5. http://ebela.in/entertainment/10-facts-about-balarama-dgtl-1.395981


উদ্ধৃতি ত্রুটি: "lower-alpha" নামক গ্রুপের জন্য <ref> ট্যাগ রয়েছে, কিন্তু এর জন্য কোন সঙ্গতিপূর্ণ <references group="lower-alpha"/> ট্যাগ পাওয়া যায়নি