বিষয়বস্তুতে চলুন

বিবেকচূড়ামণি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিবেকচূড়ামণি
লেখকআদি শঙ্কর (প্রচলিত মতানুযায়ী)[note ১]
দেশভারত
ভাষাসংস্কৃত
বিষয়হিন্দু দর্শন
ধরনঅদ্বৈত বেদান্ত
প্রকাশকউদ্বোধন কার্যালয়, কলকাতা (বাংলা অনুবাদ)
প্রকাশনার তারিখ
খ্রিস্টীয় অষ্টম শতাব্দী
পৃষ্ঠাসংখ্যা৫০৩ পৃষ্ঠা

বিবেকচূড়ামণি (সংস্কৃত: विवेकचूडामणि) হল একটি বিখ্যাত সংস্কৃত কাব্য। সম্ভবত আদি শঙ্কর[] খ্রিস্টীয় অষ্টম শতাব্দীতে এই কাব্যটি রচনা করেছিলেন। এই কাব্যে অদ্বৈত বেদান্ত দর্শন ব্যাখ্যা করা হয়েছে।[] শার্দুল বিকৃদিত ছন্দে ৫৮০টি শ্লোকে এই কাব্য রচিত হয়েছে। হিন্দু দর্শন মতে, "বিবেক" বলতে আধ্যাত্মিক দৃষ্টিকোণ থেকে চিরন্তন ("নিত্য") ও ক্ষণস্থায়ী ("অনিত্য") বস্তুগুলির মধ্যে পার্থক্য নিরূপণের বোধকে বোঝায়। বিবেকচূড়ামণি কাব্যে এই "বিবেক"কে আধ্যাত্মিকতার শিরোভূষণ এবং মোক্ষ অর্জনের পথে একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় শর্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।[] "বিবেকচূড়ামণি" শব্দটির অর্থ "প্রধান রত্ন বিবেক"।[] পরবর্তীকালে বিবেকচূড়ামণি বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়। এই কবিতাটির একাধিক টীকা ও ভাষ্যও রচিত হয়েছে।

রেজ শাহ-কাজেমির মতে, আদি শঙ্কর সম্ভবত বিবেকচূড়ামণি রচনা করেননি।[] তবে এই কবিতাটি তারই দার্শনিক মতের প্রতিচ্ছবি।[][note ২] অন্যান্য গবেষকদের মতে অবশ্য বিবেকচূড়ামণি আদি শঙ্করেরই রচনা।[]

বিষয়বস্তু

[সম্পাদনা]

বিবেকচূড়ামণি ৫৮০টি শ্লোকে রচিত একটি সংস্কৃত কাব্য। এই কাব্যটি গুরু ও শিষ্যের সংলাপের আকারে রচিত।[] এই কাব্যে গুরু আত্মার বৈশিষ্ট্য ও আত্মা-অনুসন্ধানের পথগুলির বর্ণনা দিয়েছেন এবং সেই প্রসঙ্গে শিষ্যকে ধাপে ধাপে ব্রহ্ম লাভের উপায়ের কথা বলেছেন।

কবিতার শুরুতে গোবিন্দকে (কৃষ্ণ) বন্দনা করা হয়েছে।[] এরপর আত্ম-অনুসন্ধানের গুরুত্ব ও তার উপায় এবং গুরুর লক্ষণ বর্ণনা করা হয়েছে। স্থূলদেহের প্রতি মোহের নিন্দা করা হয়েছে। অনাত্মার উপাদান নানাপ্রকার শরীর, কোষ, গুণ, ইন্দ্রিয়প্রাণের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।[] এরপর গুরু শিষ্যকে আত্ম-অনুসন্ধানের পথগুলি কথা বলেছেন, ধ্যানের পদ্ধতিগুলি আলোচনা করেছেন এবং আত্মার পর্যালোচনা করেছেন। এখানে “জীবন্মুক্ত” বা মুক্তিপ্রাপ্ত জীবের লক্ষণও আলোচনা করা হয়েছে।[] এছাড়া ভগবদ্গীতা-অনুসরণে "স্থিতপ্রজ্ঞ" ব্যক্তির লক্ষণও বর্ণনা করা হয়েছে।[]

সংস্কৃত ভাষায় এই বইয়ের দুটি টীকা পাওয়া যায়। শৃঙ্গেরি মঠের অধ্যক্ষ সচ্চিদানন্দ শবাভিনব নৃসিংহ ভারতী এই বইটির প্রথম ৭টি শ্লোকের উপর বিবেকোদয় টীকা রচনা করেন। তার শিষ্য চন্দ্রশেখর ভারতী প্রথম ৫১৫টি শ্লোকের একটি ব্যাখ্যা বা টীকা রচনা করেন।

বইটি একাধিক ভাষায় অনূদিত হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই অনুবাদের সময় সংশ্লিষ্ট ভাষাতেও টীকা রচিত হয়েছে। ইংরেজিতে স্বামী প্রভবানন্দক্রিস্টোফার ইশারউড, স্বামী মাধবানন্দস্বামী চিন্ময়ানন্দ এই বইটি অনুবাদ করে টীকারচনা করেন। তামিল ভাষায় বইটির অনুবাদ ও টীকারচনা করেন রমণ মহর্ষি। স্বামী জ্যোতিস্বরূপানন্দ মারাঠি ভাষায় বিবেকচূড়ামণি অনুবাদ করেন। স্বামী বেদান্তানন্দ বাংলায় এই বইটি অনুবাদ করেন।[১০]

বিখ্যাত পঙ্‌ক্তি

[সম্পাদনা]
  • ব্রহ্ম সত্য জগন্মিথ্যা, জীব ব্রহ্মৈব ন অপরঃ।

অনুবাদ: ব্রহ্ম সত্য, জগৎ মিথ্যা। জীব ও ব্রহ্মের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই।[১১]

• অর্থস্য নিশ্চয়ো দৃষ্টো বিচারেণ হিতোক্তিতঃ। ন স্নানেন, ন দানেন প্রাণয়মশতেন বা।। অনুবাদ: স্মরণ, মনন ও গুরুবাক্যের দ্বারা সত্যকে জানা যায়, স্নান, দান বা প্রাণায়মের মাধ্যমে পাওয়া যায় না।[১২]

  1. Reza Shah-Kazemi claims the authenticity of the "Vivekachudamani", a well-known work ascribed to Shankara, is doubtful,[] though it is "so closely interwoven into the spiritual heritage of Shankara that any analysis of his perspective which fails to consider [this work] would be incomplete".[]
  2. See also IndiaDivine.org, Authorship of Vivekachudamani and arshabodha.org, Sri Sankara’s Vivekachudamani, p.3-4, The Question of Authorship of Vivekachudamani

পাদটীকা

[সম্পাদনা]
  1. Shah-Kazemi 2006, পৃ. 4।
  2. Usha 1990, পৃ. 71–72
  3. Espín ও James B. Nickoloff 2007, পৃ. 1471
  4. Madhavananda 1926, পৃ. 1
  5. see:
    • D. Datta (1888), Moksha, or the Vedántic Release, Journal of the Royal Asiatic Society of Great Britain and Ireland, New Series, Vol. 20, No. 4 (Oct., 1888), pp. 513-539
    • Klaus Klostermaier (1985), Mokṣa and Critical Theory, Philosophy East and West, Vol. 35, No. 1 (Jan., 1985), pp. 61-71
    • Dhiman, S. (2011), Self-Discovery and the Power of Self-Knowledge, Business Renaissance Quarterly, 6(4)
  6. "Bondage and release"The Hindu। ২০০৮-০৩-১৮। ২০০৮-১১-১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৫-২২ 
  7. Sri Chandrashe hara Bharati of Sringeri। Sri Samkara’s Vivekacudamani। Mumbai: Bharatiya Vidya Bhavan। পৃষ্ঠা xxi। 
  8. "Man of wisdom"। The Hindu। ২০০৫-০৬-২৯। ২০০৬-০৫-২৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৫-২২ 
  9. "State of liberation"। The Hindu। ২০০৯-০২-১৮। ২০০৯-০২-২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৫-২২ 
  10. Nagpur, India: Ramakrishna Math; 2009
  11. Rosen, Steven (২০০৭)। Krishna's Song। Greenwood Publishing Group। পৃষ্ঠা 70। আইএসবিএন 978-0-313-34553-1 
  12. See:
    • D. Datta (1888), Moksha, or the Vedántic Release, Journal of the Royal Asiatic Society of Great Britain and Ireland, New Series, Vol. 20, No. 4 (Oct., 1888), pp. 513-539;
    • Madhavananda’s translation of Vivekachudamani published in 1921, HImalayan Series 43

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]

আরও পড়ুন

[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]