লতফিয়া এলনাদি
লতফিয়া এলনাদি Lotfia Elnadi النادي لطفية | |
---|---|
জন্ম | অক্টোবর ২৯, ১৯০৭ |
মৃত্যু | ২০০২ (বয়স ৯৪–৯৫) |
জাতীয়তা | মিশরীয় |
পেশা | বিমান চালক |
পরিচিতির কারণ | বিশ্বের প্রথম নারী পাইলটদের মধ্যে একজন এবং প্রথম মিশরীয় নারী হিসাবে মিশরের কায়রো ও আলেক্সান্দ্রিয়া থেকে বিমান উড্ডয়ন করেন। |
লতফিয়া এলনাদি (আরবি: لطفية النادي; অক্টোবর ২৯, ১৯০৭ – ২০০২) ছিলেন একজন মিশরীয় বিমানচালক। পাইলট লাইসেন্স অর্জনকারী হিসাবে তিনি একজন মিশরীয় ও আরব বিশ্বের প্রথম নারী ছিলেন।
প্রারম্ভিক জীবন
[সম্পাদনা]লতফিয়া এলনাদি ১৯০৭ সালের ২৯শে অক্টোবর কায়রোর একটি উচ্চ-বংশীয় পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।[১][২] তারপর তার প্রাথমিক শিক্ষা সম্পূর্ণ করার পর তিনি প্রত্যাশা করতেন, তিনি বিয়ে করবেন এবং একজন গৃহিনী ও মা হবেন। আল নাদির বাবা মাতবা আমিরিয়া সরকারি ছাপাখানার কর্মকর্তা, আল নাদির মাধ্যমিক শিক্ষা গ্রহণ করার কোনো কারণ দেখছিলেন না। কিন্তু আধুনিক শিক্ষা ও ভাষা অনুসরণের জন্য তার মা তাকে আমেরিকান কলেজে যোগ দিতে উৎসাহিত করেন।[৩]
আল নাদি উড়ন্ত বিদ্যালয় সমন্ধে একটি প্রবন্ধ পড়েছিলেন এবং ফ্লাইং স্কুলটি একমাত্র কায়রোতে খোলা ছিলো। তার পিতার আপত্তি থাকা সত্ত্বেও তিনি উড়ন্ত বিদ্যালয়ে নির্ধারিত হওয়ার জন্য সেখানে উপস্থিত ছিলেন। প্রথমে তিনি সাহায্য পাওয়ার জন্য একজন সাংবাদিকের কাছে গিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি যখন সেখানে ব্যার্থ হন তখন তার সাহায্যের জন্য তিনি সরাসরি ইজিপ্টএয়ার এর পরিচালকের কাছে গিয়েছিলেন। ইজিপ্টএয়ার এর পরিচালক তাকে সাহায্যে করতে সম্মত হন।[৩] উড্ডয়ন পাঠ সম্পূর্ণ করার জন্য আল নাদির অর্থ পরিশোধ করার কোনো উপায় ছিলো না। উড্ডয়ন পাঠ সম্পূর্ণ করার জন্য তিনি ফ্লাইং স্কুলের (উড্ডয়ন বিষয়ক বিদ্যালয় বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান) সচিব এবং টেলিফোন অপারেটর হিসাবে কাজ করেছিলেন।[১]
কর্মজীবন
[সম্পাদনা]এলনাদি তার বাবাকে বলেছিলেন তিনি দ্বি-সাপ্তাহিক দল অধ্যয়নে অংশগ্রহণ করবেন।[২] তিনি পরবর্তীতে উড্ডয়ন পাঠ নিয়েছিলেন ৩৩ জন পুরুষ সহপাঠীর সাথে।[১] ১৯৩৩ সালের ২৬শে সেপ্টেম্বর, আল নাদি তার পাইলটের লাইসেন্স অর্জন করেন। মাত্র ৬৭ দিনের গবেষণার পরে তিনি বিশ্বের প্রথম আফ্রিকান ও আরব বিশ্বের প্রথম নারী পাইলট হন। প্রথমে তার বাবা রাগান্বিত ছিলেন, কিন্তু আল নাদির সাফল্য দেখে তার বাবার রাগ কমে যায় এবং পিরামিডের উপর দিয়ে উড্ডয়নের অনুমতি দেন।[৩] তার কৃতিত্বের ফলে তিনি সারা বিশ্বে আলোচিত হন।[৪]
১৯৩৩ সালের ১৯শে ডিসেম্বর, আল নাদি কায়রো এবং আলেক্সান্দ্রিয়া হতে আন্তর্জাতিক উড্ডয়ন প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। ১০০ মাইল/ঘণ্টা উড়ন্ত গড় বেগে তার একক-ইঞ্জিন বিমান উড়িয়ে অন্যান্য প্রতিযোগিদের আগে শেষ প্রান্তে পৌঁছান। তিনি ২০০ মিশরীয় পাউন্ডের একটি পুরস্কার পান এবং তার প্রচেষ্টার জন্য রাজা ফুয়াদ অভিনন্দন জানান। হুদা শাওয়ারায়ী, একজন নারীবাদী নেতা, আল নাদির উৎসাহের জন্য সম্মানবার্তা পাঠান। তারপর আল নাদি তার নিজের বিমান কিনার জন্য একটি তহবিল গঠন করেছিলেন। আল নাদি মিশরের বিমানচালনা ক্লাবের উপদেষ্টা হিসাবে কাজ করতেন।[৩] তিনি তার মেরুদন্ডের আঘাতের দুর্ঘটনার আগে পাঁচ বছর বিমান চালনা করেছেন।[৫]
আল নাদির সাফল্য অনুসরণ করে প্রায় এক দশক ধরে মিশরীয় নারীরা উড্ডয়ন প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেন এবং পাইলট হন। বিশ্বযুদ্ধ আগমনের সাথে সাথে কোনো নারী পাইলট না হওয়া পর্যন্ত ডিনা-কারোল এন সাঈ পাইলট হন।[৩]
পরবর্তী জীবন
[সম্পাদনা]বিমান দুর্ঘটনার পর, আল নাদি তার চিকিৎসার জন্য সুইজারল্যান্ডে গিয়েছিলেন এবং সেখানে তিনি বহু বছর অবস্থান করেছিলেন।[৩] ১৯৮৯ সালে তাকে দেশে বেসামরিক বিমানচালনার ৫৪ তম বার্ষিকী উপলক্ষে কায়রোতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, সেখানে তিনি মিশরীয় সংস্থা এরোস্পেস এডুকেশন—এর দ্য অর্ডার অব মেরিট পুরস্কার গ্রহণ করেন।[৫] ১৯৯৬ সালে একটি প্রামাণ্য চলচ্চিত্র টেইক অফ ফ্রম দ্য স্যান্ড তার গল্প বলার জন্য তৈরি করা হয়েছিল।[৪] তার ৮০ বছর বয়সে, তার ভাতিজ এবং তার পরিবারসহ বসবাস করতে টরেন্টোতে চলে যান। তিনি কখনো বিয়ে করেননি। ২০০২ সালে কায়রোতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
উত্তরাধিকার
[সম্পাদনা]- ২০১৪ সালে গুগল ডুডল তার ১০৭তম জন্মদিন পালন করে।[৬]
- ২০১৭ সালে গুগল ডুডল তার সম্মানে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করে।[৭]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ গ حكايات, يوستينا عطية (১২ জুলাই ২০১৬)। "أول كابتن طيار" (Egyptian Arabic ভাষায়)। Cairo, Egypt: Tahrir News। ১৭ ডিসেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ডিসেম্বর ২০১৬।
- ↑ ক খ McCloskey, Keith (২০১২)। Airwork: A History। Stroud, Gloucestershire, England: History Press। পৃষ্ঠা 148। আইএসবিএন 978-0-7524-9459-3।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ Habib, Nader (২৩ অক্টোবর ২০১৪)। "Once upon a time - She wanted to be free" (1218)। Cairo, Egypt: Al-Ahram Weekly। ১৬ ডিসেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ডিসেম্বর ২০১৬।
- ↑ ক খ Ayed, Nahlah (৬ মে ২০১৩)। "Nahlah Ayed: The renewed fight for women's rights in Egypt"। Ottawa, Ontario, Canada: Canadian Broadcasting Corporation। ২৯ নভেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ডিসেম্বর ২০১৬।
- ↑ ক খ Cooper, Ann (নভেম্বর ১৯৯১)। "Lotfia El Nadi—The First Woman Pilot in Egypt" (পিডিএফ)। Ninety-Nine News। Oklahoma City, Oklahoma: Ninety-Nines: International Organization of Women Pilots। 17 (9): 5–6। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ডিসেম্বর ২০১৬।
- ↑ "Lotfia El Nadi's 107th Birthday"। www.google.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৩-০৮।
- ↑ "International Women's Day" (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৩-০৮।